সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......
বিস্তারিত পড়ুননভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......
বিস্তারিত পড়ুনওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......
বিস্তারিত পড়ুনঅনুবাদ: যাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
(এপ্রিল 2021 সংখ্যা পর)
চার. অহংকারীদের থেকে নি‘য়ামতসমূহ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। অহংকার নি‘য়ামতসমূহ ছিনিয়ে নেওয়া ও আল্লাহর আযাব অবতীর্ণ হওয়ার কারণ: সালামাহ ইবনুল আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদিন এক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে বাম হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ডান হাত দিয়ে খাও। উত্তরে লোকটি বলল, আমি পারছিনা! তার কথার প্রেক্ষাপটে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাাম তাকে বলল, তুমি পারবে না? মূলত: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথার অনুকরণ করা হতে তাকে তার অহংকারই বিরত রাখে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি আর কখনোই তার হাতকে তার মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।
ইমাম নববী রাহ. বলেন, এ হাদীসটি দ্বারা প্রমাণীত হয়, যে ব্যক্তি কোনো প্রকার অপারগতা ও যুক্তি ছাড়া শরী‘য়াতের বিধানের বিরোধিতা করে তার জন্য বদ’দোয়া করা জায়েয আছে। এ লোকটিকে তার অহংকার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণ ও তার নির্দেশ মানা হতে বিরত রাখে, তার অহংকারের তড়িৎ শাস্তি হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার অক্ষমতার জন্য বদ-দো‘য়া করেন। আল্লাহ তা‘য়ালা তার নবীর বদ-দো‘য়া কবুল করেন এবং সাথে সাথে লোকটি আক্রান্ত হয়। ফলে সে আর কখনোই তার হাতকে তার মুখ পর্যন্ত উঠাতে সক্ষম হননি। ঐ সব অহংকারী যাদেরকে তাদের অহংকার সত্যের অনুকরণ করা হতে নিষেধ করে, তারা কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তা‘য়ালা তাদের সে সব নি‘য়ামতসমূহ ছিনিয়ে নেবেন যে সব নি‘য়ামতের তারা নাফরমানী করে এবং অহংকার করে।
পাঁচ. অহংকার জমি ধ্বস ও কবর আযাবের কারণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসে বিষয়টি স্পষ্ট করেন। যেমন, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের পূর্বের যুগের এক লোক একটি কাপড় ও লুঙ্গি পরিধান করে ও তার চুল গুলো তার কাঁধের ওপর ঝুলিয়ে অহংকার করে হাঁটছিল। কাপড়দ্বয় লোকটিকে অহংকারের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ তা‘য়ালা লোকটিকে যমিনের অভ্যন্তরে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত পুঁততে থাকবে। আর সে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এ দিক সেদিক নড়াচড়া করতে থাকবে।” আল্লামা ফিরোজ আবাদি রাহ. বলেন, স্থান ধ্বসে যাওয়া অর্থ হলো, সে ভু-গর্ভে চলে গেল। আর আল্লাহ অমুককে যমিনে ধ্বসে দিল, অর্থাৎ তাকে যমিনে গায়েব করে ফেলল। আল্লামা ইবনু হাজার রাহ. বলেন, একটি চাদর ও লুঙ্গি পরিধান করে হাঁটছিল। আর সহীহ মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীসটি এ শব্দে বর্ণিত- এ কথাটির “চুলগুলোকে একত্র করে মাথা থেকে নিয়ে কাঁধ পর্যন্ত অথবা তার চেয়ে আরও বেশি ঝুলিয়ে দেওয়া। “তারজীলুশ শার” কথাটির “মাথা আঁচড়ানো ও মাথায় তেল লাগানো। ‘তাজালজুল’ শব্দের অর্থ হলো, নড়াচড়া করা। আবার কেউ কেউ বলেন, আওয়াযের সাথে নড়াচড়া করা। আর আল্লামা ইবনু ফারেস রাহ. বলেন, “কঠিন ভু-কম্পনসহ যমীনে ধ্বসে যাওয়া এবং এদিক সেদিক নড়বড় করা। সুতরাং যমীনে নামতে থাকবে কঠিন কম্পন ও হরকত সহ। আর হাদীসের অর্থ হলো, যমিন এ লোকটির দেহকে ভক্ষণ করবে না ফলে তাকে ধ্বংস করা সহজ হবে। আর বলা হবে সে এমন এক কাফির যার দেহ মৃত্যুর পর নিঃশেষ হবে না।
পরকালের জীবনে অহংকারের শাস্তি:
এক. অহংকারী ধ্বংস প্রাপ্ত লোকদের সাথে ধ্বংস হবে। ফুযালা ইবনু উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তিন ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে তোমরা আমাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। এক-যে ব্যক্তি আল্লাহর বড়ত্ব নিয়ে আল্লাহর সাথে ঝগড়া করে। কারণ, বড়ত্ব হলো আল্লাহর চাদর আর তার পরিধেয় হলো ইজ্জত। দুই- যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে। তিন- যে ব্যক্তি আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়।”
দুই. অহংকারীরা কিয়ামত দিবসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাামের নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত ও অবস্থানের দিক দিয়ে অনেক দূরে হবে। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,“কিয়ামত দিবসে তোমাদের মধ্যে যে আমার খুব প্রিয় ও মজলিশের দিক দিয়ে আমার একেবারে নিকটে অবস্থান করবে, সে হলো তোমাদের মধ্যে যারা আখলাক ও চরিত্রে উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে যে সর্বাধিক ঘৃণিত এবং মজলিশের দিক দিয়ে আমার অনেক দূরে অবস্থান করবে, সে হলো, যে অতিরিক্ত ও দীর্ঘ কথা বলে এবং মানুষের নিকট মুখ ভরে কথা বলে। সাহাবারা বললেন, যারা অতিরিক্ত ও দীর্ঘ কথা বলে, তাদের আমরা জানলাম, কিন্তু যারা মানুষের নিকট মুখ ভরে কথা বলে, তারা কারা? তিনি বললেন, অহংকারীরা।
তিন. অহংকারীরা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, যে অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর ক্ষুব্ধ: আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মনে মনে নিজেকে বড় মনে করে এবং হাঁটার সময় অহংকার করে, সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে যে অবস্থায় আল্লাহ তা‘য়ালা তার ওপর রাগান্বিত”।
চার. অহংকারীদের আল্লাহ তা‘য়ালা কিয়ামতের দিন অত্যন্ত অপমান অপদস্ত করে একত্র করবে: আমর ইবনু শোয়াইব থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাাম বলেন, “অহংকারীদের কিয়ামতের দিন বড় মানুষের আকৃতিতে ছোট ছোট পিঁপড়ার মত করে একত্র করা হবে। অপমান অপদস্থ সব দিক থেকে তাকে গ্রাস করে ফেলবে। তারপর তাকে জাহান্নামের মধ্যে একটি জেলখানা যার নাম ‘বুলাস’, তার দিকে টেনে হেঁচড়ে নেওয়া হবে। তাদেরকে জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুন চতুর্দিক থেকে গ্রাস করে ফেলবে। আর তাদেরকে জাহান্নামীদের পিত্ত, পুঁজ ও বমি থেকে তাদের পানীয় দেওয়া হবে।
হাদীসের ব্যাখ্যা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: অর্থ নিহায়া কিতাবে, ছোট ছোট লাল পিঁপড়ার দল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ নিকৃষ্ট ও ছোট হওয়ার দিক দিয়ে তারা গুড়ো গুড়ো পিঁপড়ার মত। তারা আকৃতিতে মানুষের আকৃতি, কিন্তু তাদের দেহ পিঁপড়ার মত ছোট। তারা কিয়ামতের দিন এতই অপমান অপদস্ত হবে, আল্লাহ তা‘য়ালার দরবারে তাদের কোনো মান-সম্মান বলতে কিছুই থাকবে না। হাশরবাসীরা তাদের পা দিয়ে তাদেরকে পা-পৃষ্ট করবে, তাদের প্রতি কোনো প্রকার ভ্রুক্ষেপ করবে না। জাহান্নামের মধ্যে একটি জেলখানার দিকে তাদের টেনে নেওয়া হবে, যার নাম ‘বুলুস’। জাহন্নামের আগুন তাদের গ্রাস করে ফেলবে এবং ঢেকে ফেলবে এবং জাহান্নামীদের দেহ হতে যে সব পুঁজ, বমি ও রক্ত বের হবে, তাই তাদের খেতে দেওয়া হবে। কারণ, একজন অহংকারী দুনিয়াতে বড় একটি আকার ধারণ করেছিল এবং দুনিয়াতে বড় ধরনের আসন দখল করে নিয়েছিল। তাই আল্লাহ তা‘য়ালা কিয়ামতের দিন সমগ্র মানুষের সামনে তাকে ছোট ছোট পিঁপড়ার পালের মত করে একত্র করে তাকে লজ্জা ও শাস্তি দিবেন।
পাঁচ. অহংকার জান্নাতে প্রবেশের প্রতিবন্ধক: আব্দুল্লাহ ইবনু মাসুদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যার অন্তরে একটি অণু পরিমাণ অহংকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা বললে, এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, কোনো কোনো লোক এমন আছে, সে সুন্দর কাপড় পরিধান করতে পছন্দ করে, সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করে, এসবকে কি অহংকার বলা হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাাম বললেন, আল্লাহর তা‘য়ালা নিজেই সুন্দর তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহংকার হলো, সত্যকে গোপন করা এবং মানুষকে নিকৃষ্ট বলে জানা।
ছয়. অহংকারীদের জন্য জাহান্নামের ওয়াদা দেওয়া আছে: আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি তোমাদের থেকে কারা জান্নাতি তাদের বিষয়ে খবর দিব কি? তারা হলো সব দুর্বল ও অসহায় লোকেরা, তারা যদি আল্লাহর শপথ করে আল্লাহ তা‘য়ালা তাদের দায় মুক্ত করে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাাম বলেন, আমি কি তোমাদের কারা জাহান্নামে যাবে তাদের বিষয়ে খবর দিব? তারা হলো, সব অহংকারী, দাম্ভিক ও হঠকারী লোকেরা”।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ে আল্লাহ তা‘য়ালার দরবারে বিতর্ক করে, জাহান্নাম বলে, আমার নিকট বড় বড় দাম্ভিক ও অহংকারীরা প্রবেশ করবে আর জান্নাত আল্লাহকে বলে, কি ব্যাপার আমার ভিতর শুধু দুর্বল ও বিতাড়িত লোকেরা প্রবেশ করে। তখন আল্লাহ তা‘য়ালা জাহান্নামকে বলে, তুমি হলে আমার আযাব। আমি তোমার মাধ্যমে যাকে চাই তাকে আযাব দিব। অথবা আল্লাহ বলেন, তোমার মাধ্যমে আমি যাকে চাই তাকে পাকড়াও করবো আর জান্নাতকে আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, তুমি আমার রহমত আমি তোমার দ্বারা যাকে চাই তাকে রহম করব। আর তোমাদের উভয়ের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে যথাযোগ্য অধিবাসী। আল্লামা ইবনু হাজার রাহ. বলেন, হাদীসে উল্লেখ করা হয়, কেউ কেউ বলেন, ঐ সব অহংকারী যারা তাদের মধ্যে নেই এমন কিছু নিয়ে অহংকার করে। আর “তার নিকট যা আছে তা নিয়ে বড়াই করে। আর হাদীসে যে দুর্বল লোকের কথা বলা হয়েছে, তারা হলো, যারা অহংকারীদের দৃষ্টিতে দুর্বল ও নিকৃষ্ট এবং তাদের চোখে তারা মানুষ হিসেবে গণ্য নয়। অন্যথায় আল্লাহ তা‘য়ালার দরবারে তারা অনেক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। তাদের অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব ও কুদরতের অনুভূতি থাকার কারণে তারা তাদের নিকট যা আছে তাকে তুচ্ছ মনে করে এবং আল্লাহ তা‘য়ালার ইবাদত বন্দেগীতে তারা অত্যধিক বিনয়ী ও ছোট হয়ে থাকে। এ কারণেই হাদীসে তাদের দুর্বল লোক বলা হয়েছে।
সাত. অহংকারীদের অপমান অপদস্ত করে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, “আর কাফিরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে কি রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করত এবং এ দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করত’? তারা বলবে, ‘অবশ্যই এসেছিল’; কিন্তু কাফিরদের ওপর আযাবের বাণী সত্যে পরিণত হলো। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর চিরকাল তোমরা সেখানে অবস্থান করবে। অহংকারীদের বাসস্থান কতই না মন্দ”। (আয-যুমার : ৭১-৭২) আল্লাহ তা‘য়ালা আরও বলেন,“আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (গাফির : ৬০)
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, অহংকার হলো আমার চাদর আর বড়ত্ব হলো আমার পরিধেয়। যে ব্যক্তি আমার এ দু’টির যে কোনো একটি নিয়ে টানাটানি করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।
অহংকারের চিকিৎসা: একটি কথা মনে রাখতে হবে, কিবির তথা অহংকার এমন একটি কবীরা গুনাহ যা মানুষকে ধ্বংস করে দেয় এবং একজন মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতকে নষ্ট করে দেয়। এ কারণেই একজন মানুষের জন্য অহংকার থেকে দূরে থাকা বা তার জীবন থেকে তা দূর করা অকাট্য ফরজ। আর এ কথাও সত্য যার মধ্যে অহংকার থাকে সে শুধু আশা করলে বা ইচ্ছা করলেই অহংকারকে দূর করতে বা অহংকার হতে বাঁচতে পারবে না। তাকে অবশ্যই এ মারাত্মক ব্যাধির চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। অহংকারের চিকিৎসা নিম্নরূপ:
১. অন্তর থেকে অহংকারের মূলোৎপাটন করা: প্রথমে অহংকারী নিজেকে চিনতে হবে, তারপর তাকে তার প্রভুকে চিনতে হবে। একজন মানুষ যখন নিজেকে ভালোভাবে চিনতে পারবে এবং আল্লাহর তা‘য়ালা বড়ত্ব ও মহত্বকে সঠিকভাবে বুঝতে পারবে তখন তার মধ্যে বিনয় ও নম্রতা ছাড়া আর কিছুই থাকতে পারে না, অহংকার তার থেকে এমনিতেই দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালাকে যখন ভালোভাবে চিনবে, তখন সে অবশ্যই জানতে পারবে বড়ত্ব ও মহত্ব একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য প্রযোজ্য নয়।
মানুষ তাকে চেনার জন্য প্রথমে তাকে তার নিজের সৃষ্টির মধ্যে চিন্তা করতে হবে। সে নিজে প্রথমে কি ছিল, তারপর দুনিয়াতে আসার পর মাঝখানে তার অবস্থা কেমন ছিল এবং তার পরিণতি কি হবে? এসব নিয়ে চিন্তা করলে তার মধ্যে অহংকার থাকতেই পারে না। কিভাবে অহংকার করবে? আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে প্রথমে এক ফোটা নিকৃষ্ট পানি থেকে বীর্য হিসেবে তৈরি করেন তারপর তিনি বীর্যকে আলাকায় রূপান্তরিত করেন তারপর আলাকাকে গোশতের টুকরা তারপর গোশতের টুকরাকে হাঁড়ে পরিণত করেন। তারপর আবার হাঁড়কে গোশতের আবরণ দিয়ে সাজান। এ ছিল তার সৃষ্টির সূচনা। আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে প্রথমেই পরিপূর্ণ মাখলুক রূপে সৃষ্টি করেননি, বরং আল্লাহ তা‘য়ালা মানুষকে তার হায়াতের পূর্বে মৃত্যু দিয়েই শুরু করেন। অনুরূপভাবে শক্তির পূর্বে দুর্বলতা, ইলমের পূর্বে অজ্ঞতা, হিদায়াতের পূর্বে গোমরাহী এবং সম্পদশালী হওয়ার পূর্বে অভাব ও দরিদ্রতা দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করেন। এতদসত্ত্বেও তার কিসের অহংকার, বড়াই, গৌরব ও অহমিকা?! (ক্রমশ:)