সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......
বিস্তারিত পড়ুননভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......
বিস্তারিত পড়ুনওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......
বিস্তারিত পড়ুনমহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, (হে রাসুল!) "আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে যথার্থই ভালবেসে থাকো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, তবেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।" (আল-ইমরান : ৩১) এটি হচ্ছে মহান আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশের ঘোষণা। অন্যদিকে হিজরী সনের রবিউল আউয়াল মাস এলে মুসলিম সমাজে, বিশেষ করে বাংলাদেশ, তথা পাক-ভারত উপমহাদেশে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম দিন উপলক্ষে নানা ধরনের আয়োজন চলতে থাকে। শুরু হয় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবীর আয়োজন। পাশাপাশি দেয়াল লিখন, পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণ, ফেস্টুন টানানো, ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন উপলক্ষে শ্রদ্ধা ও সম্মান। কারণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন হচ্ছে আমাদের কারো কারো মতে শ্রেষ্ঠ ঈদের দিন। এতেও সমস্যা নেই। আমরা সকলেই জানি, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, আবার এই মাসেই আল্লাহর ডাকে সারা দিয়ে ইন্তেকাল করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করে থাকলেও মুমিন-মুসলিম এর দেয়া সালাম তাকে ফেরেশতাদের মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহ শোনানোর ব্যবস্থা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যদি কেউ সম্মানের সাথে আমার উপর একবার দরূদ পড়ে, তাহলে আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন।" যদিও রবিউল আউয়াল মাসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহ জাগতিক কর্মকা- থেকে সরাসরি বিদায় নেন, তা সত্ত্বেও এই মাসেই তার জন্ম দিনকে শ্রেষ্ঠ ঈদ ঘোষণা দিয়ে, আমরা সবাই কিছুটা বাড়া-বাড়ীর দিকেই নিয়ে যাচ্ছি। রাসূল সা. কে ভালোবাসার মধ্যেই একজন মুসলিমের ঈমানের পূর্ণতা নিহিত। মহানবী সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তানাদি এবং অন্য সবকিছুর চেয়ে আমি প্রিয় হিসেবে গণ্য হই।" রবিউল আউয়াল মাসে, মিলাদুন্নবীর এই মাসে অনেকে ঘরে ঘরে নবীর জন্মদিন পালন করে মিলাদ দেয়ার মাধ্যমে, আবার আমাদের বড় একটি অংশ সিরাতুন্নবী অর্থাৎ নবী জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা ইত্যাদিতে মশগুল হয়। প্রকৃতপক্ষে মিলাদুন্নবী এর শাব্দিক অর্থ দিয়ে যদি ধরা হয়, তাহলে নবীর জন্মদিন। ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম হয়েছিল, সেদিন ছিল সোমবার, কিন্তু প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল কি সোমবার হয় ? তাহলে এই দিনটির তাৎপর্য কী সেই রকমই ? বিষয়টা তেমন নয়। তারপরও আবেগ ইত্যাদির কারণে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন উপলক্ষে কয়েক দিন, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে একদিনকে সামনে নিয়ে, অনেক আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করি। প্রকৃতপক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে আনুষ্ঠানিকতার শেষ নেই। শেষ হতে পারে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে নেই। তিনি আমাদের জন্য দু'টি সম্পদ রেখে গেছেন, কুরআন এবং তার বাণী হাদীস সমগ্র। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা এই দু’টিকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো, তাহলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না”। (আল হাদীস) তাই মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহীহ হাদীস সমূহ এর মাধ্যমে আমরা যে বার্তা পাই, সেগুলো অনুসরণ করা, সেগুলো প্রতিপালন করা, সেগুলো অনুসারে জীবন পরিচালনা করা-এটাই ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় কর্তব্য। কিন্তু আমরা তা থেকে অনেক ক্ষেত্রে যোজন যোজন দূরে সরে গেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনের কিছু কিছু অংশ আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবন গাঁথার সাথে আনার চেষ্টা করছি, আর সিংহভাগ সুন্নত, মহানবীর দেখানো পথ পরিহার করে আমরা প্রতিদিন চলছি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম নিয়েছিলেন রবিউল আউয়াল মাসে, তাকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র রবিউল আউয়াল এর একটি দিনেই আনুষ্ঠানিকতা থাকবে, আলোচনা-পর্যালোচনা থাকবে, স্লোগান দেয়া থাকবে, মিছিল-মিটিং থাকবে, এটা হতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থাকবে সারাটি বছর, প্রত্যেকটি মাস, প্রতিটি সপ্তাহ, প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত, আমাদের চলার পথের অনুসরণীয় একজন মডেল হিসেবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সকলকে সবকিছুই শিখিয়ে গেছেন। কাজের বিষয়গুলোতে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলোর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেখা গেছে তার গুরুত্বপূর্ণ সহীহ হাদীসগুলো সব সময় একজন মুসলিমকে সৎ পথে ধাবিত করার চেষ্টা করেছে। ইবাদত, সামাজিক কাজ, অর্থনৈতিক লেনদেন, রাজনৈতিক আচার-আচরণ, রাষ্ট্রপরিচালনার বিষয়, পারস্পরিক শত্রুতা-বন্ধুত্ব, যুদ্ধ-বিগ্রহ, বেচাকেনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কোন কিছুই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাদ রাখেন নি। তিনি মদীনায় একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, সেখানে এই সকল বিষয় বাস্তবায়ন করে, একটি আদর্শ রাষ্ট্রের মডেল তৈরি করে, দেখিয়ে গেছেন যে, আল-কুরআন এবং সুন্নাহ অনুসারে একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, পরিচালিত হতে পারে, টিকে থাকতে পারে। অথচ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একটি দিনের আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে বন্দি করে রাখার যে পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের সমাজের অনেকেই এগিয়ে যাচ্ছেন, তাতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বাকি দিনগুলোতে আমাদের কাছে মনে হয় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তেমনটা গুরুত্ববহ কোন ব্যক্তি নন। (নাউজু-বিল্লাহ) তাই আসুন আমরা সবাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনপঞ্জির প্রত্যেকটি বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে আমাদের জীবনে পরিস্ফুট করার চেষ্টা করি, তাঁর জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজকে আমাদের জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজের সাথে মিলিয়ে নেই, তাহলেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম দিন, অথবা তার জীবন গাঁথা থেকে আমাদের অনেক কিছু অর্জিত হবে। আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের শাফায়াতকারী হিসেবে কবুল করুন। আমীন।