সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......
বিস্তারিত পড়ুননভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......
বিস্তারিত পড়ুনওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......
বিস্তারিত পড়ুনসার্বজনীনতা ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, জাতি নির্বিশেষে গোটা মানবজাতির জন্য গ্রয়োগযোগ্য কল্যাণ। ব্যক্তির আত্মিক নিবেদনের আকুতি যদিও ব্যক্তিকেন্দ্রিক, কিন্তু জাগতিক সংলগ্নতায় স্রষ্টার ঈপ্সিত মানব সমাজ নির্মাণে আত্মিকতা হচ্ছে মননের উৎসে দৃষ্টিকোণ এবং মূল্যবোধ হিসেবে বহুমাত্রিক। এটি স্রষ্টাসূত্র ছাড়াও মানবিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক উপযোগিতায় সক্রিয় সাপেক্ষ। অন্তর্গত আত্মিকতা ও জাগতিক বহিরাবরণ উভয় ক্ষেত্রেই আত্মিকতার অবদান রয়েছে। মানুষের মধ্যে ভেদ-অসাম্য, শোষণ-বঞ্চনা ও অত্যাচার-নিপীড়নমুক্ত সবার জন্য কল্যাণবহ মানব পরিবেশ এর স্বর্ণফসল।
বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা.-এর পবিত্র জীবনাচরণ, কথামালা ও ইঙ্গিতাদি সম্বলিত পবিত্র হাদীসের নির্যাসকে এক কথায় ‘মানবতা’ও বলা যায়। এ মানবতা সার্বজনীন, তা আল্লাহর কালাম কুরআনেরই বাস্তবতার বহি:প্রকাশ। সার্বজনীনতা বলতে আমরা যে সর্বমানবের কল্যাণধর্মিতা বুঝি, ইসলামের সামগ্রিক নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত মহানবী সা.-এর বাণীর সার্বজনীনতার আওতায় তা তো বটেই, গোটা বিশ্ব-জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ, নিসর্গজগত তাবৎ মাখলুকাত কল্যাণ ও শান্তির আশ্বাস পাচ্ছে। জলে-স্থলে, অন্তরীক্ষে শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত এ সার্বজনীন জীবন দর্শনের শান্তির ছায়া। প্রিয়নবী সা. কে শুধু মুসলিম উম্মাহর জন্য রাসূল রূপে মনে করার অবকাশ নেই; কেবল মানব জাতির ত্রাণকর্তারূপে দেখাটাও বেশ সীমিত। তিনি তো সারা সৃষ্টিজগতের জন্য কল্যাণ ও শান্তির শ্রেষ্ঠ বার্তাবাহী, বিশ্বজগতের জন্য রহমত। এটা কোনো মানবীয় দাবী বা অতিশয়োক্তি নয়, মহান রাব্বুল আলামীনের ঘোষণায় এ সত্যই উচ্চারিত হয়েছে। আমি তো আপনাকে প্রেরণ করেছি বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ। (আম্বিয়া:১০৭)। তাইতো এই পরশমণির পরম সৌভাগ্য যারা লাভ করলো, চরিত্র তাদের সুষম হলো, জীবন্তু স্বপ্ন তাদের সফল হলো। খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি হলো তারা। এ স্বর্গ পুষ্পের সান্নিধ্য সৌরভ যারা পেলো, বিশ্ব বাগানে তারা গোলাপের খোশবু ছড়ালো। সেই মহামানবই হলেন রাহমাতুল্লিল আলামীন আমাদের প্রিয়নবী রাসূলে আরাবী মুহাম্মদ সা.। এই মহামানবের উত্তম আদর্শ নিয়েই বক্ষ্যমাণ নিবন্ধের মূল বিষয়।
রাসূল সা.-এর চরিত্র মাধুরী
মুহাম্মদ সা. হলেন মহান চরিত্রের অধিকারী ও আদর্শের জীবন্তু প্রতীক। জন্মের পর হতেই তার মাঝে বিরাজ করছিলো সর্বোত্তম চরিত্র মাধুরী, সর্বোত্তম আদর্শ, সর্বোত্তম মহৎ মানুষ ও সর্বোত্তম প্রতিবেশী ইত্যাকার মহত্তম গুণ। বাল্যকাল থেকেই তার স্বভাব ছিলো কলুষতা, কাঠিন্য, কর্কশতা ও অহমিকামুক্ত। অনুক্ষণ তিনি ছিলেন দয়াশীল, শ্রদ্ধাশীল সহানুভূতিশীল ও ঔদার্যশীল এবং নিষ্কলুষ নির্ভেজাল সোনা। তাইতো অতি অল্প বয়সেই ‘আল-আমীন’ উপাধিতে বিভূষিত হন। অধিকন্তু পরনিন্দা, অশ্লীল ও অশিষ্ট বাক্য কখনই তার পবিত্র মুখ হতে নি:সৃত হয়নি। এক কথায় তিনি হলেন, সকল গুণের আধার। বিশ্ববাসী সকলের নিমিত্ত নমুনা ও মহান আদর্শ। প্রিয়নবী সা. এর সার্বজনীন কল্যাণমুখী আচরণ ও কর্মকান্ড অভেদ মানবিক একাত্মতার সর্বোচ্চ উদাহরণ হিসেবে নন্দিত হয়েছে। শ্রেষ্ঠ রাসূল রূপে অনুপম চরিত্র মাহাত্ম ছিলো তার মহিমার ভূষণ। এ জন্য আর্দশিক কারণে তার শত্র“ বা ভিন্ন মতাবলম্বীরাও তাকে বিশ্বস্ততার শ্রেষ্ঠ, অতুলনীয় প্রতীক হিসেবে সম্মান জানিয়েছে তার সময়ে এবং পরবর্তী সময়ে দেশ-বিদেশে। রাসূল সা.- এর আগমন যে গোটা মানব জাতির তথা সৃষ্টি জগতের জন্য কল্যাণবহ, এ কথাটি ভিন্ন মতের তাত্ত্বিক কিংবা মূল্যায়নকারীরা কোনো-না-কোনো পর্যায়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন। এ এক অনিবার্য অর্জন, বিজয়।
রাসূল সা. এর সততা
সততা উত্তম চরিত্রের পূর্বশর্ত, সততা উত্তম আদর্শ। সততার মাঝেই নিহিত আছে ইহকালিন সাফল্য ও পরকালের নাজাত। বলা বাহুল্য, জন্ম হতে মৃত্যু অবধি রাসূল সা. হলেন সততার মূর্ত প্রতীক। যার দরুন মক্কার কাফির-মুশরিক সকলের সকাশে তিনি আস-সাদিক তথা সত্যবাদী নামে পরিচিত। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায়, মক্কার কাফের গোষ্ঠী ছিলো তার ঘোরতর শত্র“। তাকে হত্যা করে ইসলামের বিলুপ্তির জন্য সদা অধীর আগ্রহে প্রহর গুনতো। এতদসত্ত্বেও তাদের ধনসম্পদ গচ্ছিত রাখার সর্বাধিক বিশ্বস্ত বলে তাকেই জ্ঞান করতো। সুতরাং তার সততার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেই মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবিষ্ট হয়েছিলো। তাই তার সততা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা একান্ত অপরিহার্য।
রাসূল সা. এর উদারতা
প্রিয়নবী সা.-এর অনুপম বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে একটি বিশেষ গুণ হলো, উদারতা। ইসলাম আবির্ভাবের পর দুনিয়ার বুক থেকে এ গুণটি নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য বিধর্মীরা কোনো প্রচেষ্টাই বাদ রাখেনি। এমনকি প্রিয় নবীজির উপর নৃশংস নির্যাতনও চালিয়েছে তারা। তদসত্ত্বেও সবসময় তিনি তাদের প্রতি ছিলেন উদার, ছিলেন মহৎপ্রাণ। একবার উহুদ প্রান্তরে কাফের বাহিনীর তরবারির আঘাতে হুজুর সা.- এর পবিত্র দেহ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো। বর্শার ফলা শিরস্ত্রাণ ভেদ করে মাথায় আঘাত হেনেছিলো। দাঁত মুবারক শহিদ হয়েছিলো। কিন্তু সেই করুণ মুহূর্তেও তিনি ঔদার্য ও ক্ষমার আদর্শ ত্যাগ করেন নি। বরং কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে এই বলে দোয়া করলেন, ‘হে রাব্বুল আলামিন! ওদের ক্ষমা করে দাও। এরা তো অবুঝ।’
রাসূল সা.এর সহিষ্ণুতা
মহানবী সা.-এর ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার অবস্থা এমন ছিলো যে, সমস্ত সাহাবায়ে কেরামদের ধৈর্যও একত্রে তার সমকক্ষ হবে না। এর একটি নমুনা হযরত আবু হুরাইরা রা.-এর বর্ণনায় পরিলক্ষিত হয়। তিনি বলেন, ‘একবার এক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করে দিলো। সাহাবিরা এ কান্ড দেখে রাগে রোষে তেড়ে এলেন। রাসূল সা. তখন তাদের থামিয়ে বললেন, ‘তাকে তোমরা ছেড়ে দাও। যেখানে সে পেশাব করেছে, তাতে পানি ঢেলে দাও। স্মরণ রেখো, তোমাদের আসানী সৃষ্টিকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে। দু’র্বিষহ বিড়ম্বনা সৃষ্টিকারী হিসেবে নয়।’ (বুখারী, কিতাবুল অযু)
রাসূল সা. এর বদান্যতা
বদান্যতা-দানশীলতা একটি মহৎ গুণ। এর পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিফলন মহানবী সা.-এর মাঝেই ঘটেছিলো। প্রিয়নবী সা. নিতান্তই দরিদ্র্য ও অসহায়ের ন্যায় দিনাতিপাত করতেন। তথাপি পৃথিবীর কোনো রাজা-বাদশাহের দান-দক্ষিণা তার ধারে কাছে পৌঁছতে পারে নি। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ মিলে তিরমিজি শরিফে। নবীজি সা.-এর কাছে একবার নব্বই হাজার দিরহাম আসলে তিনি একটি মাদুরের উপর উপবেশ করে সেখান থেকে সমুদয় দিরহাম বণ্টন করে দিলেন। বণ্টন শেষ হওয়ার পরক্ষণেই এক ভিখারী এসে হাজির। নবী কারীম সা. বললেন, ‘আমার কাছে এখন কিছুই নেই। তাই আমার নাম বলে কারো কাছ থেকে কিছু নিয়ে নাও। পরে আমি তা পরিশোধ করে দিবো।’ (খাসায়েলে নববী)
ইয়াতিম-অসহায়দের প্রতি দয়া
রাসূল সা. ইয়াতিম ও অসহায়দের প্রতি অপরিসীম দয়া-অনুকম্পা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করতেন। বহু অনাথের মুখে তিনি মধুর হাসি ফুটিয়েছেন। একবার ঈদগাহে যাওয়ার পথে ইয়াতিম এক বাচ্চাকে কাঁদতে দেখে প্রিয় নবীজী তাকে আদর দিয়ে দুঃখ-দুর্দশার কথা জিজ্ঞেস করলেন। সব শুনে রাসূল সা. তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে এলেন। গোসল করিয়ে সুন্দর কাপড় পরিয়ে ঈদগাহে নিয়ে গেলেন। অনন্তর তাকে বললেন, ‘হে বৎস! আমি যদি তোমার বাবা হই, আয়েশা যদি তোমার মা হয় আর ফাতেমা যদি তোমার বোন হয়, তাহলে কি তুমি সস্তুষ্ট?’ ছেলেটি সমস্বরে জবাব দিলো, হ্যাঁ, অবশ্যই। এবার তার রসনায় আনন্দের হাসি বিকশিত হলো।
অমুসলিমদের প্রতি সদাচার
রাসূল সা. মুসলমান এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি যেরূপ সদাচারণের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতেন, তদ্রুপ অমুসলিম বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গেও করতেন এবং সর্বদা তাদের প্রতি সৎ মনোভাব প্রকাশ করতেন। একবার এক ইহুদি আল্লাহর হাবিবকে মারতে এসে তার মেহমান বনে গেলো। রাতে রাসূল সা. যথাসাধ্য আপ্যায়ন করে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। কিন্তু শয়ন প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে ইহুদি লোকটি বিছানায় পায়খানা করে চলে গেলো। সকালে হুজুর সা. তার কোনো সন্ধান পেলেন না। রাসূল সা.-এর চেহারা মুবারক মলিন হয়ে গেলো। আফসোস আর আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘হায়! আমি বুঝি তার যথাসাধ্য আপ্যায়ন করতে পারিনি’। এমনি ভাবে একবার এক বেদুঈন এসে প্রিয়নবী সা.-এর চাদর ধরে এতো জোরে টানতে লাগলো যে, গলায় ফাঁস লাগার উপক্রম হলো এবং জোর গলায় বলতে লাগলো, ‘হে মুহাম্মদ! আমাকে কিছু দাও’। রাসূল সা. তখন তার দিকে ফিরে হেসে কিছু দেয়ার নির্দেশ দিলেন। (বুখারী, মুসলিম)
জীবজন্তুর প্রতি সদাচার
প্রিয়নবী সা. শুধু মানুষের প্রতিই সদাচরণ করেছেন, এমন নয়। বরং তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্ট অন্যান্য প্রাণী ও জীবজন্তুর প্রতিও অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত সদাচরণ প্রদর্শন করতেন। একবার এক সফরে দু’জন সাহাবী একটি পাখির বাসা থেকে দু’টি পাখির ছানা নিয়ে এলেন। মা পাখিটি তার ‘বাচ্চর’ সঙ্গে সঙ্গে করুণ সুরে মুক্তির আবেদন জানাতে লাগলো। প্রিয় নবীজী এ অবস্থা দেখে বললেন, ‘এ পাখি ধরে কেনো এই মা পাখিটাকে অধীর করে তুলেছো? বাচ্চা দু’টি ছেড়ে দাও। উভয়ে বাচ্চা দু’টি ছেড়ে দিলো। (সিরাতুন্নবী: ৬/২৪১) বলা বাহুল্য, জীবজন্তুর ব্যাপারে হুজুর সা. উম্মতকে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছেন। জীবজন্তুর প্রতি দয়া, অনুগ্রহ, তাদের দানা-পানির ব্যবস্থা এবং ও গুলোকে সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট না দেয়ার হুকুম দিয়েছেন।
শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে রাসূল সা.
পৃথিবীর বুকে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে, মানবজাতির মধ্যে শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্য। এর ফলে মানুষ হারিয়ে ফেলে ভ্রাতৃত্ববোধ, বিলীন হয়ে যায় তাদের মধ্যকার পারস্পরিক মায়ামমতা, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দপূর্ণ মধুর সম্পর্ক। তাদের জীবনে নেমে আসে শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্যের ঘোর অন্ধকার। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত প্রিয়নবী সা.-এর আগমনের পূর্বে গোটা পৃথিবী শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্যের অতল তলে নিমজ্জিত ছিলো। এর ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ছিলো চরম অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র পর্যায়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব, এমনকি এর ফলে সামান্য কোনো তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রতিহিংসার কারণে বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে যেত ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ। পৃথিবী থেকে এই শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে আল কুরআনের নির্দেশ বাস্তবায়ন করাই ছিলো তার দায়িত্বসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ফলে ইতিহাস সাক্ষী, মহানবী সা.-এর আমলে মদীনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সেখানে কোনোরকম শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্যের লেশ মাত্রও ছিলো না। অধুনা বিশ্বে এই অশান্ত, অস্থিতিশীলতা শ্রেণী ও বর্ণবৈষম্য দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে রাসূল সা.-এর অনুসরণ ও আনুগত্য।
মহানবী সা.এর সুন্নাহর আদর্শ সার্বজনীনতায় দিগন্ত বিস্তৃত
আমরা যদি এ দিকসমূহের বাস্তবায়নে দৃষ্টি দেই, তাহলে দেখবো রাসূল সা. তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফলে অল্পকালের মধ্যেই ইসলামি সভ্যতা সংস্কৃতির শীর্ষ অবস্থান মানবজাতি প্রত্যক্ষ করেছে। এ জয়যাত্রার আওতায় যেসব জনপদ এসেছে, সেসব এলাকার জনসাধারণ মহানবীর অনুসারীদের সালাম জানিয়ে সাদরে গ্রহণ করেছে। যুগ যুগ ধরে, শতাব্দীর পর শতাব্দী কাল পরিক্রমায় যে মানুষ শোষিত-বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত ছিলো, তাদের শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নিপীড়নের অবসান ঘটলো। সৃষ্টি হলো ধর্ম-বর্ণ এবং আর্থ সামাজিক শ্রেণী নির্বিশেষে সানন্দ সহাবস্থানের মানব পরিবেশ, বাস্তবে সার্বজনীনতা।
পবিত্র কুরআনে যত সুন্দর, সত্য, সততা, মানবতা ও কল্যাণময় গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে, তার নিখুঁত নিখাদ ও পরিপূর্ণ চিত্রায়ন ঘটেছিলো রাসূল সা.-এর জীবনাদর্শে। মানব সমাজের উন্নতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও চারিত্রিক সকল ক্ষেত্রে গৌরবময় উত্তরণের পথই হলো অনুসরণীয় আদর্শ। আদর্শহীন কোনো জনগোষ্ঠী পৃথিবীতে সমাদৃত হতে পারে না। তাই আজকের এই করুণ ও অবক্ষয় মুহূর্তেও যদি মুসলিম উম্মাহ ফিরে পেতে চায় তাদের হারানো অতীত, তাহলে তাদের অনুসরণ করতে হবে প্রিয়নবী সা.-এর পবিত্র জীবনাদর্শ। সুতরাং সেই আদর্শের পথেই হোক আমাদের নবযাত্রা। আদর্শিক প্রত্যয়ে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠুক আমাদের সমাজ জীবন।