সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......
বিস্তারিত পড়ুননভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......
বিস্তারিত পড়ুনওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......
বিস্তারিত পড়ুনদুনিয়ার জীবনে রাসূল সা. এর উত্তম আদশ
একবার মক্কার কুরাইশরা রাসূল সা. এর কাছে এসে বলল, আল্লাহ তায়ালা আপনার পূর্ববর্তী নবীগণকে তাদের সত্যায়নে মু’জিজা বা অলৌকিক ঘটনা প্রদান করেছেন। হযরত মুসা আ. কে লাঠি মু’জিজা স্বরূপ প্রদান করেন। হযরত ঈসা আ. কে মৃতকে জীবিত করা, অদৃশ্য খবর বলে দেয়ার মু’জিজা প্রদান করেন। হযরত সালেহ আ. কে উটনি প্রদান করেছিলেন। বিভিন্ন নবীকে বিভিন্ন মু’জিজা প্রদান করেছেন। আপনি যেহেতু আল্লাহর নবী দাবী করেন তাই আপনি আপনার সত্যায়ন স্বরূপ আমাদেরকে মু’জিজা বা অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শন করেন। আমাদের মক্কার এ সাফা পাহাড়কে স্বর্ণে রূপান্তরিত করেন। আপনি যদি আল্লাহকে বলে এ সাফা পাহাড়কে স্বর্ণে রূপান্তরিত করতে পারেন তবে আমরা বুঝব যে আপনি সত্য নবী। রাসূল সা. তাদেরকে বললেন, আমি যদি আল্লাহকে বলে এ পাহাড়কে স্বর্ণে রূপান্তরিত করতে পারি তবে কি তোমরা আমার উপর ঈমান আনবে। তারা বলল, আল্লাহর শপথ করে বলছি; আপনি এমন করতে পারলে আমরা আপনাকে বিশ্বাস করব, আপনি যা নিয়ে আসছেন তা বিশ্বাস করব ও মানব ।
মক্কার কুরইশদের কথা বিশ্বাস করে এবং তাদের ঈমান আনার আশায় রাসূল সা. সাফা পাহাড়কে স্বর্ণে রূপান্তরিত করার দোয়া করলেন। তখন আল্লাহ তায়ালা আয়াত অবতির্ণ করেন, তারা (মক্কার কাফেররা) আল্লাহর সাথে শক্ত শপথ করে বলছে যে, যদি তাদের কাছে নিদর্শন (সাফা পাহাড়কে স্বর্ণে রূপান্তরিত করা) আসে তবে তারা ঈমান আনবে। আপনি বলুন, সকল নিদর্শন আল্লাহর কাছে আছে (আল্লাহ ইচ্ছা করলেই সে নিদর্শন পাঠাতে পারেন) আপনি জানেন না যে, যখন (তাদের চাহিদামত) নিদর্শন আসে তবুও তারা ঈমান আনবে না । আল্লাহ তায়ালার নীতি হল, যখন কোন জাতি কোন মু’জিজা চায় তারপর আল্লাহ তায়ালা যদি তাদের চাহিদামত মু’জিজা পাঠান। তারপরেও যদি তারা ঈমান না আনে তবে আল্লাহ তায়ালা সে জাতিকে ধ্বংস করে দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমাকে নিদর্শন প্রেরণ থেকে বিরত থাকতে হয়েছে এ কারণে যে, পূর্ববর্তীরা (তাদের চাহিদামত নিদর্শন পাঠানোর পরেও) নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে। আমি সামুদ (জাতি) কে বুঝাবার উদ্দেশ্যে উটনি দান করেছিলাম অতপর তারা তার প্রতি জুলম করেছে। আমি ভীতি প্রদশনের উদ্দেশ্যেই নিদর্শণ প্রেরণ করি ।
আল্লাহ তায়ালা জিবরাঈল আ. কে পাঠালেন আর বললেন, হে রাসূল সা.! আপনি যদি চান তবে আল্লাহ তায়ালা সাফা পাহাড়কে স্বর্ণে রূপান্তরিত করবেন। তবে যদি তারপরেও তারা ইমান না আনে তবে আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী জাতির মত তাদের উপর আযাব পাঠাবেন ও তাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন। আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, তারা ঈমান আনবে না। আর যদি আপনি চান তবে তাদের চাহিদা মত কোন নিদর্শন পাঠাবেন না, আর আপনি তাদেরকে দাওয়াত দিতে থাকেন তবে তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে তারা তো শুভ পরিণাম আখিরাতে পাবে আর যারা ঈমান আনবে না আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর আজাব পাঠাবেন না ও তাদেরকে সমূলে ধ্বংসও করবেন না। তখন রাসূল সা. বললেন যে, আমি এমন নিদর্শন চাই না। বরং আমি তাদেরকে দাওয়াত দিতে থাকব। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে তারা তো আখেরাতে চির সূখ আর চির বিলাসিতার জান্নাত পাবে, আর যারা ঈমান আনবে না তাদের কারণে আমার উম্মতকে ধ্বংসও করা হবে না ।
অন্য এক আয়াতের শানে নুজুলের মধ্যে এসেছে যে, হযরত জিবরাঈল আ. রাসূল সা. এর কাছে বসা ছিলেন। তখন আকাশের কিছু দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। আর তা দেখে হযরত জিবরাঈল আ. ভয়ে কাঁপতে আরম্ভ করেন। রাসূল সা. জিজ্ঞাসা করেন, কি ব্যাপার! হে জিবরাঈল আ.! কি ব্যাপার! কি হয়েছে? আপনি ভয়ে এত কাঁপছেন কেন? হযরত জিবরাঈল আ. বলেন, আজ আকাশের এমন একটি দরজা খোলা হয়েছে যা আগে কখনো খোলা হয়নি। আমার ভয় হচ্ছে যে, সে দরজা থেকে আজাব এসে আপনার উম্মতকে ধ্বংস করে দেয়া হবে।
এমন আজাব আসার উপক্রম কেন হল? কারণ রাসূল সা. এর উম্মতের মধ্যে কুরাইশদের কিছু কাফের রাসূল সা. এর অভাব নিয়ে, রাসূল সা. এর দারিদ্র নিয়ে উপহাস করেছিল। কুরাইশরা তিরস্কার করে বলছিল যে, এ কেমন রাসূল! তাকে আমাদের মত বাজারে যেতে হয়, চাকুরি করতে হয়, ব্যবসা করতে হয় ইত্যাদি। যদি সে সত্যিকারের নবী হত তবে তার আলাদা কিছু থাকত; ফেরেশতারা তার বডিগার্ড রূপে থাকত। তাকে ধনভান্ডার দেয়া হত তা থেকে আমাদের সমাজের বাড়িওয়ালাদের মত বসে বসে খেত। উনি কেমন রাসূল! ওনাকে আমাদের অধিনে চাকুরী করতে হয়। ইহুদীদের কাছে কাজ করতে হয়। খাবারের জন্য ইহুদীর কাছে বন্ধক রাখতে হয়। তখন আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা. কে শান্তনা স্বরূপ আয়াত নাযিল করেন। আর এ আয়াতগুলো জান্নাতের দারোয়ান হযরত খাজেন আ. এর মাধ্যমে রাসূল সা. এর কাছে পাঠানো হয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের কথার বিবরণ দিয়ে বলেন, তারা বলে, এ কেমন রাসূল যে, খাদ্য আহার কওে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে? তার কাছে কেন কোন ফেরেশতা নাযিল করা হল না যে, তার সাথে সতর্ককারী হয়ে থাকত? অথবা তার কাছে ধনভান্ডার দেয়া হত, অথবা তার একটা বাগান হল না কেন, যা থেকে তিনি আহার করতেন? জালেমরা বলে, তোমরা তো একজন জাদুগ্রস্ত ব্যক্তিরই অনুসরণ করছ। দেখুন, তারা আপনার কেমন দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে। অতএব তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, এখন তারা পথ পেতে পারে না। কল্যাণময় তিনি (আল্লাহ তায়ালা), যিনি ইচ্ছা করলে আপনাকে তদপেক্ষা উত্তম বস্তু দিতে পারেন-বাগ-বাগিচা, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয় এবং তিনি আপনাকে দিতে পারেন প্রাসাদসমূহ ।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত রিদওয়ান আ. রাসূল সা. এর কাছে এসে বললেন, এই যে দুনিয়ার সকল ধনভান্ডারের চাবিসমূহ। আপনি চাইলে এ সকল ধনভান্ডারের মালিক হবেন এবং আখিরাতেও আপনার কোন অংশ কমবে না। রাসূল সা. হযরত জিবরাঈল আ. এর দিকে পরামর্শ নেয়ার উদ্দেশ্যে তাকালেন। হযরত জিবরাঈল আ. মাটির দিকে ইশারা করলেন যে, আপনি আল্লাহর জন্য বিনয় অবলম্বন করুন। তখন রাসূল সা. বললেন, হে রেদওয়ান! দুনিয়াতে আমার কোন প্রয়োজন নেই। অভাবই আমার কাছে প্রিয়। আমি চাই গোলাম হতে, যখন অভাব হবে ধৈর্য ধারণ করব আর যখন স্বচ্ছলতা হবে শুকরিয়া আদায় করব। রাসূল সা. বলেন, যে দুনিয়াকে ভালবাসল সে আখেরাতের ক্ষতি করল আর যে আখেরাতকে ভালবাসল সে দুনিয়ার ক্ষতি করল। অতএব তোমরা যা স্থায়ী তাকে অস্থায়ীর উপর অগ্রাধিকার প্রদান কর । হযরত ওহাব ইবনু মুনাব্বাহ রা. বলেন, দুনিয়া ও আখেরাতের দৃষ্টান্ত হল ঐ ব্যক্তির মত যার দু’টি সতিন আছে। যদি সে একজনকে খুশি করতে চায় তবে আরেকজন কে অখুশি করে । তাই একজন দুনিয়া ও আখেরাত একটা আরেকটার সতিন। অথচ রাসূল সা. কে দুনিয়ার ধনভান্ডার প্রদান করার সাথে এ নিশ্চয়তাও প্রদান করা হচ্ছে যে আখেরাতে আল্লাহর কাছে আপনার জন্য যা আছে তার মধ্যেও বিন্দুমাত্র কোন ঘাটতি হবে না। আপনি দুনিয়াতেও রাজা থাকবেন আর আখেরাতের রাজা হবেন।
অন্য এক হাদীসের মধ্যে এসেছে, হযরত জিবরাঈল আ. রাসূল সা. এর পাশে বসেছিলেন তারপর আকাশের দিকে তাকান। তখন একজন ফেরেশতা আকাশ থেকে অবতরণ করেন। হযরত জিবরাঈল আ. বলেন, এ ফেরেশতা সৃষ্টির পর থেকে আর কখনো আকাশ থেকে অবতরণ করেন নি। সে ফেরেশতা রাসূল সা. এর কাছে এসে বলছেন, আমার রব আমাকে আপনার কাছে একটি বার্তা নিয়ে পাঠিয়েছেন। তিনি আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন আর বলেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে রাজা নবী বানাবেন নাকি একজন গোলাম নবী বানাবেন। আপনি নবী হওয়ার সাথে রাজা হতে চান নাকি গোলাম হতে চান। হযরত জিবরাঈল আ. রাসূল সা. এর পাশে ছিলেন। হযরত জিবরাঈল আ. রাসূল সা. কে বললেন যে, আপনি আপনার পালনকর্তার জন্য বিনয় অবলম্বন করুন। তখন রাসূল সা. বললেন, আমি আল্লাহর গোলাম ও রাসূল হতে চাই । আমি রাজা ও রাসূল হতে চাই না।
রাসূল সা. এর কাছে আকাশ থেকে আওয়াজ আসে। তখন আরশ পর্যন্ত আকাশের সকল দরজাগুলো খুলো দেয়া হয়। আর আল্লাহ তায়ালা আদন জান্নাতকে তার ডালাসমূহের মধ্যে একটি ডালা ঝুলিয়ে দিতে বলেন। তার উপর সবুজ জবরজদের একটি কক্ষ আছে যার সত্তর হাজার লাল ইয়াকূত মূতির দরজা আছে। তখন জিরাঈল আ. বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি চোখ উঠান। অতপর রাসূল সা. নবীগণের বাড়ীসমূহ ও কক্ষসমূহ দেখতে পান। আর রাসূল সা. এর বাড়ীগুলো সকল নবীগণের বাড়ীর উপরে। এটা রাসূল সা. এর জন্য বিশেষ মর্যাদা। তখন একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, হে মুহাম্মাদ সা.! আপনি কি খুশি? রাসূল সা. বলেন, আমি খুশি। আর রাসূল সা. উত্তরে বলেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে দুনিয়াতে যা (সকল ধনভান্ডারের চাবি) দিবেন তা’ আখেরাতে আমার জন্য বরাদ্দ রাখুন। দুনিয়াতে পাওয়া সকল অভাব, সকল তিরস্কার, সকল অত্যাচার আর জ্বালাতন আমি সহ্য করব আর এর বিনিময়ে আখেরাতে যেন আমার উম্মতের জন্য সুপারিশ করতে পারি সে অধিকারটুকু আপনার কাছে আবদার করছি । তিনি কেমন রাসূল? আর আমরা তার কেমন উম্মত? সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। একবার এক আনসারী মহিলা রাসূল সা. এর বাসায় আসলেন। রাসূল সা. এর বিছানায় দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখলেন যে, সেটা শুধু একটি মাদূর। সে আনসারী হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূল সা. কি শুধু এ মাদুরে ঘুমায়। সে বিছানায় কোন চাদর বা তোষক কিছুই নেই? হযরত আয়েশা রা. উত্তর দিলেন, রাসূল সা. শুধু মাদুরে ঘুমান আর তাতে কোন তোষক বা চাদর কিছুই নেই। তিনি বাসায় গিয়ে একটি তোষক বানালেন তারপর রাসূল সা. এর বাসায় নিয়ে আসলেন। রাসূল সা. বাসায় এসে যখন তোষক বিছানো দেখলেন তখন তিনি বলছেন, এটা কি? হযরত আয়েশা রা. বলেন, একজন আনসারী মহিলা আপনার বিছানার করুণ অবস্থা দেখে আপনার জন্য একটি তোষক বানিয়ে আপনাকে হাদিয়া করেছেন। রাসূল সা. বললেন, এটা তাকে ফেরত দিয়ে দিবে। হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি চাচ্ছিলাম, সেটা আমার বাসায় থাকুক তাই সেটা ফেরত দেই নি। রাসূল সা. আবার এসে যখন দেখলেন তখন বললেন, তোমাকে সেটা ফেরত দিতে বলেছিলাম না? কেন ফেরত দাও নি? আমি বললাম, আমি চাচ্ছিলাম, সেটা আমার বাসায় থাকুক তাই সেটা ফেরত দেই নি। তখন রাসূল সা. বলেন, আমি যদি চাইতাম তবে আল্লাহ তায়ালা এ পাহাড়গুলো স্বর্ণ-রূপায় রূপান্তরিত করে দিতেন । যদি এ অভাব, এ দারিদ্রতা আর এ অনটন নিয়ে আমার কোন অভিযোগ থাকত বা আমার কোন অসস্তুষ্টি থাকত তবে আল্লাহ তায়ালা স্বর্ণ-রূপার ধনভান্ডার আমাকে প্রদান করতেন। আমি এরকম অভাবের মধ্যেই থাকতে চাই।
হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সা. একবার বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমার অভাব-অনটন দেখে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছেন, হে রাসূল! আমি আপনার জন্য মক্কার মরুভূমিকে স্বর্ণ বানিয়ে দেই। রাসূল সা. বলেন, আমি সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বলেছি, হে আল্লাহ! আমি একদিন ক্ষুধার্ত থাকতে চাই আর আপনাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে সবর করতে চাই। আর একদিন খেতে চাই এবং তৃপ্ত হতে চাই আর আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই ।
রাসূল সা. এর জীবনে অভাব-অনটন রাসূল সা. এর ইচ্ছায়ই ছিল। এমনকি রাসূল সা. নিজেও গরীব ছিলেন না। নবুওয়াতের আগে রাসূল সা. এর স্ত্রী ছিলেন হযরত খাদীজা রা.। তিনি ছিলেন সেরা ধনীদের একজন। তিনি তার সকল সম্পদ রাসূল সা. এর কাছে সমর্পন করেন। হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূল সা. এর কাছে হযরত খাদীজা রা. এর কথা বেশী শুনার কারণে একবার ঈর্ষান্বিত হয়ে বললাম, তিনি তো একজন বৃদ্ধা ছিলেন। তার পরিবর্তে আল্লাহ তো আপনাকে আরো উত্তম স্ত্রী প্রদান করেছেন। তারপরেও কেন তার কথা সারাক্ষণ স্মরণ করেন। রাসূল সা. অনেক রাগ করলেন। যার ফলে আমি অনেক ভয় পেলাম ও মনে মনে বললাম, হে আল্লাহ! আপনি যদি আমার ব্যাপারে রাসূল সা. এর রাগকে দূর করে দেন তবে আমি কখনো তাকে মন্দ ভাবে আলোচনা করব না। রাসূল সা. যখন আমার অনুতাপ দেখলেন তখন বললেন, তাকে কিভাবে ভুলব? সবাই যখন আমাকে অবিশ্বাস করেছে ও অস্বীকার করেছে তখন সে আমাকে বিশ্বাস করেছে ও স্বীকার করেছে। সে আমাকে তার জীবন ও সম্পদ দ্বারা সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছেন । তাই রাসূল সা. মক্কায় থাকাবস্থায় ধনী ছিলেন আর যখন মদিনায় যান তখন তো উনিই রাজা। গণিমতের সম্পদ তো তার কাছেই, তিনি যেভাবে চান সেভাবে বন্টন করতে পারেন। খাইবার বিজয়ের পরে অনেক সম্পদ হস্তগত হয়। এমনকি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা খাইবার সম্পদের পঞ্চমাংশ রাসূল সা. কে দান করেছেন। রাসূল সা. সে সম্পদের অধিকাংশ সাহাবাদের মাঝে বন্টন করে দেন।
মক্কা বিজয়ের পরে হাওয়াজেন এলাকা বিজয়ের পরে অনেক সম্পদ গণীমত স্বরূপ আসে। রাসূল সা. তার সকল সম্পদ সাহাবাদের মাঝে বন্টন করে দেন। হাওয়াজেন বিজয়ের পরে গণীমতের সম্পদ দখলের পরে আবু সুফিয়ান উকি দিয়ে দেখছেন। রাসূল সা. তাকে জিজ্ঞাসা করেন কি ব্যাপার? সে বলে আমাকে যদি কিছু সম্পদ দিতেন। রাসূল সা. বলেন, তোমাকে একশত উট দিলাম। সে বলে, আমার সন্তান মুয়াবিয়া আছে। রাসূল সা. বললেন, তাকে আরো একশত দিলাম। এটা দেখে সাফওয়ান বিন উমাইয়াহ বলতে লাগল, হে রাসূল সা.! আমাকে দিবেন না? রাসূল সা. বললেন, তোমাকে একশত উট দিলাম। তিনি আবার বললেন, আমাকে আরো দিবেন? রাসূল সা. বললেন, তোমাকে আরো একশত উট দিলাম। তিনি আবার বললেন, আমাকে আরো দিবেন? রাসূল সা. বললেন, আরো? তোমাকে একশত উট দিলাম । একজন গ্রাম্য সাহাবী এসে রাসূল সা. এর কাছে দান চাইলে রাসূল সা. তাকে বললেন, মাঠভর্তি যত ছাগল আছে সব তোমাকে দিয়ে দিলাম। ধনী হলেই সবাই দান করতে পারে না। সাফওয়ান ও তার মত নব মুসলমানগণ মক্কায় গিয়ে ঘোষণা দিতে লাগল, রাসূল সা. এমন দান করছেন, যে দান নবী ছাড়া কেউ করতে পারে না। তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, কারণ ইসলাম গ্রহণ করলে আর অভাবের আশংকা থাকবে না ।