সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......
বিস্তারিত পড়ুননভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......
বিস্তারিত পড়ুনওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......
বিস্তারিত পড়ুন(ফেব্রুয়ারী ২০১৯ সংখ্যার পর) কেউ বলতে পারেন, তাদের মধ্যে যে বেশী সঠিক বা বেশী উত্তম; তাকে সবাই মিলে মানলে সবার মধ্যে ঐক্য তৈরী হতে পারে। এর উত্তরে হযরত ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম বলেন, যদি উত্তমের অনুসরণ ধরা ও অনুত্তমের অনুসরন বাদ দেওয়ার বিধান থাকত তবে সাহাবা ও তাবেঈনের যুগে সবাই শুধু উত্তমের অনুসরণ করত এবং কম উত্তমের অনুসরণ বাদ দিত। কিন্তু সাহাবা ও তাবেঈগণ এমন করেন নি । ইবনু তাইমিয়া রাহ. বলেন, এ মাযহাবসমূহের যে কোন একটি যে ধরবে তার জন্য সেটা বৈধ হবে ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা আল্লাহ ব্যতিত যে মুর্র্তিগুলোকে ডাকে তাদের তোমরা গালিগালাজ করোনা; তবে তারাও শত্রুতাবশত আল্লাহকে গালিগালাজ করবে । এই আয়াতের আলোকে সমস্ত ওলামাদের কথা যে, মুসলমানদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না। ইসলামের বিধান হল, কোন খারাপ কাজে বাধা দিলে এর চেয়ে বড় খারাপ কাজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সে খারাপ কাজ থেকে বাধা দেয়া যাবে না। অতএব ভিন্নমতের মাযহাবের অনুসারীগণ যদি হারামও করে {যদিও কোন মাযেহাবে হারাম বা ওয়াজিব নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোন মতভেদ নেই। অধিকাংশ মতভেদই হল উত্তম আর অনুত্তম নিয়ে} তবুও সে হারাম কাজে বাধা দেওয়ার ফলে যদি মুসলমানগণের মধ্যে বিভক্তি, বিশৃঙ্খলা, ঝগড়ার মত বড় হারাম কাজের সম্ভাবনা থাকে তবে সে হারামের প্রতিবাদ করা যাবে না।
মাযহাবের মুজতাহিদ ইমামগণ এত মতভেদ করা সত্ত্বেও তাদের আপোষের পরস্পর সম্পর্ক কতটা উত্তম ছিল? সকল ইমামগণ আমাদের সামনে আদর্শ। হযরত শাফেয়ি রাহ. একবার হযরত আবু হানিফা রাহ. এর কবরের পাশে ফজরের নামায পড়েছেন আর তার মাযযহাবের সম্মানার্থে কুনুত পাঠ করেন নি । অর্থাৎ এক ইমাম অন্য ইমামের সম্মানার্থে নিজের মাযহাব ত্যাগ করেছেন। ইমাম আহমদ রাহ. রক্ত বের হলে অযু ভাঙ্গার মত প্রদান করতেন। একবার একজন তাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনার নামাযের ইমামের যদি রক্ত বের হয় আর সে অযু না করে তবে কি তার পিছনে নামায পড়বেন? হযরত আহমদ রাহ. বলেন, কি ভাবে আমি ইমাম মালিক, সাইদ ইবনুল মুসাঈয়ীবের রাহ. পিছনে নামায পড়ব না । হযরত শাফেয়ী রাহ. বলেন, যে ফিকাহ শিখতে চায় সে হযরত আবু হানিফা রাহ. এর উপর নির্ভরশীল । হযরত আহমদ ইবনু হাম্বল রাহ. বলেন, আল্লাহ তায়ালা প্রতি একশত বছরের মাথায় উম্মতের জন্য একজন পাঠান যিনি তাদের দ্বীনকে সংস্কার করেন। হযরত ওমর ইবনু আব্দুল আজীজ রাহ. ১ম শত বছরের মাথায় ছিলেন আর আমি আশা করছি, ২য় শত বছরে হযরত শাফেয়ী রাহ. ছিলেন । হযরত আহমাদ রাহ. বলেন, আমি জ্ঞান, পরহেজগারী, দুনিয়া বিমূখতা ও আখেরাত কে অগ্রাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে হযরত আবু হানিফা রাহ. কে এমন স্থানে পেয়েছি যে, সে স্থানে অন্য কেউ পৌঁছতে পারবে না । হযরত মালেক রাহ. বলেন, হযরত আবু হানিফা রাহ. যদি এই দেয়ালের দিকে তাকান ও বলেন যে এটা স্বর্ণের, তবে তিনি তা প্রমাণ করে দিতেন ।
তাই কোন মাযহাবের সমালোচনা করা যাবে না। বরং চার মাযহাবের সবাই একমত যে, আমি যেটা বলি সেটা বেশী সঠিক আর অন্য মাযহাব যেটা বলে এটাও সঠিক কিন্তু আমার চেয়ে কম সঠিক। কোন ঈমাম বা তার অনুসারীগণ মনে করে না যে, অন্য মাযহাবের অনুসারীগণ যা করে তা সব হারাম কাজ করছে। বরং অধিকাংশ মতভেদ হল মোস্তবাহাব বা উত্তম-অনুত্তমের মধ্যে। যেমন সকল মাযহাবের অনুসারীগণ একভাবে নামাযের মধ্যে হাত বাধে না। কেউ নাভির নিচে, কেউ নাভির উপরে, কেউ বুকের উপরে আবার কেউ হাত বাধা ব্যতিরেকে নামায পড়ে। তবে কোন ইমাম বলে না, দৃষ্টান্ত স্বরূপ বুকের উপর হাত বাধা বাধ্যতামুলক বা নাভির নিচে হাত বাধা হারাম। বা ফাতেহার শেষে আমিন জে¦ারে বলা আবশ্যক বা যারা আস্তে আমীন বলে তাদের নামায হবে না। বরং সকল মতভেদ হল এরকম, কেউ বলে বুকের উপর হাত বাধা উত্তম আর কেউ বলে নাভির নিচে উত্তম; এভাবে কেউ বলে, জে¦ারে আমীন বলা উত্তম আর কেউ বলে আস্তে বলা উত্তম। অর্থাৎ অধিকাংশ মতভেদ হল মোস্তাহাবের মধ্যে। অথচ ঝগড়া করা, বিদ্বেষ ছড়ানো, বিভক্তি সৃষ্টি করা ও সমালোচনা করা হারাম। তবে সামান্য মোস্তাহাবের মতপার্থক্য নিয়ে মুসলমানদের মাঝে বিভক্তি করা, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা কিভাবে কাম্য হতে পারে?
সকল আলেমগণের ঐক্যমত যে, চার মাযহাবের ভিন্ন কোন মাযহাব মানা বৈধ নয় । সালেহ আল উসাইমন বলেন, সাধারণ মানুষ রাহ ইমামগণের অনুসরণ ছাড়া কোন সুযোগ নেই কারণ তারা কুরআন-হাদীসে গবেষণা করতে পারে না । বিন বাজ রাহ. বলেন, চার মাযহাব সঠিক ও সত্য । তিনি আরো বলেন, যখন কোন মানুষ দলিল জানে না তখন তার উচিত হল, চার মযহাবের কোন এক মাযহাবের অনুসরণ করা । মোহাম্মাদ বিন আবুদল ওয়হাব নাজদী বলেন, আমাদের মাযহাব আহলে সুন্নাতের ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল। আমরা চার মাযহাবের সমালোচনা করি যতক্ষণ তারা কুরআন-হাদীস ও ইজমার বিরোধিতা না করে । তিনি আরো বলেন, আমাদের মাযহাব আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাত ও চার ইমামের মাযহাব । তার ছেলে আব্দল্লাহ বলেন, যারা চার মাযহাবের অনুসরণ করে আমরা তাদের সমালোচনা করি না । সালেহ ইবনু ফাওজান রাহ. বলেন, কোন বইয়ের দ্বারা আমি চার মাযহাবকে অস্বীকার করব? সালেহ আল উসাইমিন বলেন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের অনুসারীগণ চার ইমামের একজন আহমাদ বিন হাম্বালের অনুসারী । ইবনু গুনাম আহসাই লেখেন, সাউদ বিন আব্দুল আজিজ চার মাযহাবের উপর পাঠদানের আদেশ করেছেন । ইমাম ইবনু তাইমিয় রাহ. বলেন, যে আবু হানিফা রাহ. এর ব্যাপারে ধারণা করে যে, উনি যুক্তির জন্য হাদীস বাদ দেন সে ভুল করেন। কারণ সফরে নাবিজ দ্বারা অযু করার মত অনেক মাসআলার ক্ষেত্রে যুক্তি বাদ দিয়ে হাদীস গ্রহণ করেছেন। চার মাযহাবের কোন ইমাম কোন ওজর ছাড়া কখনো কোন হাদীস পরিত্যাগ করেন নি ।
সৌদী আরবের অন্যতম ও সমসাময়িক যুগের সালাফী বড় আলেম (যিনি কিছুদিন পূর্বে ইন্তিকাল করেছেন) শাইখ সালিহ আল-উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হলো, সালাতে উচ্চ স্বরে 'আমীন' বলবো, নাকি নীচু স্বরে বলবো? তিনি উত্তর করলেন, জাহেরী সালাতসমূহে উচ্চস্বরে আমীন বলা সুন্নাহ। কারণ, এটি ক্বিরাআতের অনুষঙ্গ। তবে, এ বিষয়টি মুসলিমদের মাঝে বিতর্ক ও হিংসা-প্রতিহিংসার উপক্ষল্য যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এটি (অমৌলিক বিষয়ে বিতর্ক-বিসংবাদ) সালাফে সালেহীনের পথ নয়। সালাফগন অনেক বিষয়েই মতানৈক্য করেছেন, কিন্তু এর উপর ভিত্তি করে একজন অন্যজনকে পথভ্রষ্ট মনে করতেন না। ।
অতএব সকল ইমাম এমনকি লা মাযহাবি আলেমগণ সবাই একমত যে, কোন মাযহাবের অনুসারী কারো কোন সমালোচনা করা যাবে না। ভিন্ন মতাবলম্বী, ভিন্ন মাযহাবের কাউকে ভুল বা পথভ্রষ্ট বলা যাবে না। লা মাযহাবী ভাইগণ সর্বদা যাদের কথা বলে এবং যাদেরকে তারা গুরু মানে তারাই বলছেন, চার মাযহাব সঠিক; সাধারণ মানুষ চার মাযহাবের কোন এক মাযহাব মানতে পারে; ভিন্ন মাযহাবের কারো সমালোচনা করা যাবে না; মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না। “তোমরা ভুল আমরা সঠিক” “তোমাদের এটা ভুল ওটা ভুল” “তোমাদের এরকম নামায হয় না” এরকম কথা বলা যাবে না।
অথচ কিছু লা মাযহাবী ভাই ও কিছু দেশিয় কট্ররপন্থি আলেম গণহারে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন, মাযহারেব অনুসারীগণকে পথভ্রষ্ট বলছেন। যার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরী হচ্ছে যে, সারা জীবনের নামায হয়নি। অনেক বেনামাজি এরকমও বলেন, যদি আলেমদের কথামত সারা জীবনের নামাযই হয়নি তবে আর নামায পড়ে লাভ কি? এ কারণে সকল সাধারণ মানুষকে আশ^স্ত করা যাচ্ছে যে, লা মাযহাব এর প্রবক্তা আলেমগণ এবং লা মাযহাবি বড় আলেমগণও একবাক্যে বলেন, চার মাযহাবই সঠিক। সাধারণ মানুষ যে মাযহাবেরই অনুসরণ করবে সেটাই সঠিক। অতএব কট্ররপন্থি কোন লা মাযহাবি কারো কথা শুনে বিভ্রান্ত হবেন না, হতাশ হবেন না। উপরন্ত হানাফি মাযহাবের সকল মাসআলা কুরআন-হাদীসের ভিত্তিতে তৈরী হয়েছে। কুরআন-হাদীসের সকল প্রমাণ গুলি আমার বই ইসলামি বিধান এ উল্লেখ করেছি।(সমাপ্ত)