সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-কুরআন

নভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-হাদীস

ওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......

বিস্তারিত পড়ুন

বেশী বেশী সদকা করুন

ফারহানা মাহবুবা

আপনি যদি কখনো শুনেন এমন কোনো ডাক্তারের কথা যে ডাক্তার কিনা যে রোগের রোগীই আসুক, শুধু একটা পার্টিকুলার অষুধই দেয় সবাইকে, সব রোগের জন্য তার কাছে একটাই অষুধ; শুনে কেমন লাগবে আপনার?? 

তেমনই লাগতো আমার যখন দেখতাম, আম্মুর কাছে যেইই আসতো, যে প্রবলেম নিয়েই কথা হতো-

আমাদের বাসা যেহেতু ইনফরমালি পলিটিক্যাল অফিস কাম স্যোশাল ওয়েলফেয়ার মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অংশে কম ছিলো না, তাই এদিকে ভাত খাচ্ছি, ওদিকে পরিচিত-অপরিচিত আন্টিদের কথা শুনছি আম্মুর সাথে, এদিকে পড়ালেখা করছি, ওদিকে আন্টিরা, এদিকে ভাইবোনরা খেলছি, ওদিকে আন্টিরা..আমাদের বাসায় আমাদেরই জায়গা হতো কম, পরিচিত-অপরিচিত অন্য মানুষেই ভরা থাকতো বেশী- তো যে আন্টি যে সমস্যার কথাই বলতেন, আম্মু'র একটাই রিপল্লাই শুনতাম, "সদকা দেন!"

ছেলে মেয়ে কথা শুনেনা! "সদকা দেন!"

জামাই পরকীয়া করে! "সদকা দেন!" শ্বশুরবাড়ী তাদের বউ সংগঠন করে তা মেনে নিচ্ছেনা! "সদকা দেন!"  কেউ খুব খুব অসুস্থ! "সদকা দেন!" পুলিশ কাউকে ধরে নিয়ে গিয়েছে! "সদকা দেন!" জামাই মারে! "সদকা দেন!"

আমার অবস্থা বুঝেন! আন্টিরা যখন তাদের সমস্যার কথা বলতো আম্মুকে, আমি পড়ি-খাই-খেলা করি-গল্পের বই পড়ার ভান করি, যাই করি, করতে করতে শুনতাম আর খালি মনে মনে বলতাম, এত কথা বলে কোনো লাভ নাই আন্টি! আম্মু আপনার এই দুই/তিন ঘণ্টা কথাবার্তার পর একটা কথাই আপনাকে বলবে "সদকা দেন!" সেদিন অনেক বছর পরের কথা... একজনের সাথে কথা হচ্ছে তার একটা পার্সোনাল প্রবলেম নিয়ে। শুনতে শুনতে আমি কয়েকবার বললাম, 'আপু, কিছু সদকা দেন।' 

একটু পর উনি হাসতে হাসতে বললেন, 'আরে কী মুশকিল! তোমাকে যাইই বলি, যখনই বলি, তুমি খালি বলো 'সদকা দেন!'

ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ থতমত খেয়ে বসে ছিলাম।

সেই আমার ছোটবেলায় ভ্রু কুঁচকে আম্মুর "সদকা দেন!" "সদকা দেন!" উত্তর শোনার কথা মনে পড়ছিলো! তাহলে আমিও কেনো এখন একই কথা বলি? ভাবতে ভাবতে ভাবছিলাম, আম্মু কেনো বলতো, এখনো কেনো বলে, জিজ্ঞেস করিনি কখনো। কিন্তু আমি নিজে যখন কুর'আন স্টাডি আবার নতুন করে শুরু  করেছি-খালি পদে পদে দেখছি আল্লাহ খালি দান করার কথা বলেছেন! খালি দান করার কথা বলেছেন! খালি দান করার কথা বলেছেন! বার বার, বার বার, আয়াতে আয়াতে, পদে পদে দেখি, আল্লাহ যেন ডেকে ডেকে দান করতে বলছেন! আমার তো কুর'আন পড়তে পড়তে একেকবার মনে হয় যেন অবস্থাটা এমন, আল্লাহ যেন আরেকটু হলে দান করাটাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার মত ফরজ করে দিতেন! আপনি সাহাবীদের জীবন নিয়ে ঘাঁটেন, ওরে আল্লাহরে, প্রকাশ্যে-গোপনে দান কাকে বলে! দান করার যেন হুলুস্থুল প্রতিযোগিতা!  যার কিছু নাই, সেও কিছু না কিছু দান করবেই!

আমি ভাবি, রাসূল সা. ও কেনো বললেন, কিচ্ছু যদি না থাকে, হাসিটা দাও, ওই হাসিটুকুও সদকা! 

আমি কেনো আপনাদেরকে কথায় কথায় নিজে নিজে কুর'আন পবার/ ইসলামকে জানার চেষ্টার কথা বলি জানেন? নিজে যখন ঘাটবেন, নিজে যখন পড়বেন, অবাক হয়ে দেখবেন-এই যে বেশীরভাগ মওলানারা যে ধরনের ইসলামের কথা বলে, এই যে যেসব ওয়াজ নসিহত শুনলেই মনে হয়-ইসলাম মানেই হলো সবার আগে ধরো মেয়েদের, বান্ধো মেয়েদেরকে, তারপর ঘরের কোণায় ঢুকায়ে রাখো সিন্ধুকের ভিতরে, এতেই "বীর" সেনানীদের ইসলাম হাসিল হয়ে যাবে (!!);

যেন ইসলাম মানেই মেয়েদেরকে টাইট দেয়া! যেন ইসলাম মানেই সবার আগে মেয়েদেরকে পর্দা করানো, তাদেরকে সূর্যের আলো না দেখানো! যেন ইসলাম মানেই হলো মেয়েদের চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত বিধি নিষেধ আর ছেলেদের টাখনু আর দাঁড়িতেই ইসলাম আটকে গিয়েছে! আপনি নিজে নিজে যখন পড়বেন, ঘাঁটবেন, জানবেন, অবাক হয়ে দেখবেন- এ যে আরেক ইসলাম!

যে ইসলামে নিজের চেয়ে অন্য মানুষের উপকার করার কথা বেশী! 

যে ইসলামে অন্যদের উপর দারোয়ানগীরি করা কঠোরভাবে নিষেধ! 

যে ইসলামে খালি কথায় কথায়, পদে পদে ফকীর-মিসকিনদেরকে, যারা নীডি তাদেরকে খাওয়াতে বলা হয়েছে, বার বার বলা হয়েছে, এমনভাবে বলা হয়েছে, আপনার মনে হবে, যেন তাওহীদ-রিসালাত-আর আখিরাতের পরেই আপনার মেইন কাজ মানুষ এর উপকার করা! দান করা!  

আম্মুর অনেক কথা, অনেক কাজ, ছোটবেলায় বুঝিনি। বিরক্ত হতাম তখন উল্টো। 

কিন্তু এখন মনে হয়, আম্মু কিছু কিছু দিক থেকে ইসলামকে এত ভালভাবে বুঝেছেন আলহামদুলিল্লাহ যা অনেক বড় বড় স্কলার-রাও বুঝতে পারেন নি। এজন্যেই আম্মু জীবনে একটা বই-ই লিখেছে, যে বইটার নাম-ই হচ্ছে "আল্লাহ'র পথে অর্থ ব্যয়"!  

আম্মুর কাছে দেখে দেখেই সাব-কনশাসেই শিখেছি- সংসারের যে দশটাকা খরচ, তা থেকে এক টাকা হলেও সদকার জন্য আলাদা করে রেখে দিতে হয়। সদকা জমানো টাকা থেকে না, সদকা দিতে হয় নিজের খুব কষ্টের দরকারের টাকা-পয়সা থেকেই! আম্মুকে দেখেছি, যে মানুষটা এসেছে, গায়ে ছেঁড়া শাড়ী পড়া, আম্মু পুরানো শাড়ী না, বরং আম্মুর গায়ে যে ভাল শাড়ীটা পড়া ছিলো, সেটাই খুলে দিয়ে দিয়েছে, দেয়ার সময় বলে দিয়েছে "গায়ের থেকে খুলে দিলাম গো! ধুয়ে নিয়ো গায়ে দেয়ার আগে!" 

আম্মুর মত আপনিও দিয়ে দেখতে পারেন। অনবরত সদকা দেয়ার অভ্যাস করুন। কথায় কথায় সদকা দেয়ার অভ্যাস করুন।

একদম কথায় কথায়! উঠতে বসতে!

এক টাকা পারলে এক টাকাই!

আল্লাহ গুনতে বসবেন না আপনি কয়টাকা সদকা দিয়েছেন, আল্লাহ দেখবেন আপনি দিতে চেষ্টা করেছেন। এমন হতেই পারে- আপনি এক টাকা সদকা দিয়ে যে সওয়াব পাচ্ছেন, অন্য কেউ হয়তো এক লাখ বা এক কোটি টাকা দিয়েও সেই সওয়াব পাচ্ছে না! সদকা ছোট নাকি বড় সে কথা না ভেবে, অনবরতঃ সদকা দেয়ার অভ্যাস করাটাই হচ্ছে মূল কথা।