সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......
বিস্তারিত পড়ুননভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......
বিস্তারিত পড়ুনওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......
বিস্তারিত পড়ুনসৃষ্টির সেরা জীব মানুষ মূলত সামাজিক জীব। মানুষকে ঘিরেই পরিবেশ-প্রকৃতি ও সমাজের সৃষ্টি। পরিবার, পরিবেশ ও সমাজ নিয়ে ইসলামের পরিবেশগত চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। পরিবেশে জীবের বাসোপযোগী গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পানি ও মাটি। মূলত মাটি থেকেই অনেক কিছু উৎপন্ন হয় এবং উৎপাদিত শস্য পানি দ্বারা জীবিত থাকে। এ প্রসঙ্গে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের জন্য নিদর্শন একটি মৃতভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা ভক্ষণ করে। আমি তাতে উৎপন্ন করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝর্নাধারা, যাতে তারা ফল খায়।’ (ইয়াসিন: ৩৩) পরিবেশ সুস্থ, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে রয়েছে ইসলামের তাকিদ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের ধ্বংস নিজেরা ডেকে এনো না।’ অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুণ সমুদ্র ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে।’
আমরা জানি, গাছ মানুষ ও পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু। সবুজ গাছপালার ওপরই নির্ভর করে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর টিকে থাকা। এই গাছ ইচ্ছে হলেই কাটা যাবে না। কারণ ‘গাছের প্রাণ আছে’-এটা হাদীসের বাণী। হাদীসে রাসূল সা. থেকে জানা যায়, এক লোক যখন অকারণে একটি গাছের ডাল ভাঙে তখন নবী কারীম সা. সে লোকটির চুল মৃদুভাবে টান দিয়ে বলেন, তুমি যেমন শরীরে আঘাত পেলে ব্যথা পাও, গাছের পাতা বা ডাল ছিঁড়লে গাছও তেমন ব্যথা পায়।
প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্টি উভয় পরিবেশের সমন্বয়েই সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এ সুন্দর পরিবেশ। একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য অজীব ও জীব প্রতিটি উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভৌতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক কারণে এ উপাদানগুলোর মধ্যে যে কোনো একটির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলে সামগ্রিক পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং পরিবেশ দূষণ হয়। মানুষের অসচেতনতা এবং অনিয়ন্ত্রিত আচরণের কারণেই পরিবেশ দূষণ হচ্ছে ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। মানব সৃষ্টি বিভিন্ন কারণে উৎপাদিত ক্ষতিকারক পদার্থ, যেমন- গ্রিন হাউস গ্যাস, ইগজোস্ট গ্যাস, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, আর্সেনিকযুক্ত বর্জ্য, পারদ, ক্যাডমিয়াম, সিসা, বালাইনাশক, আগাছানাশক, ধোঁয়া, ধোঁয়াশা, ধূলিকণা, ময়লা-আর্বজনা ইত্যাদি মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ করে। গ্রিন হাউস ইফেক্টের কারণে বায়ুমন্ডলের তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই গ্যাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড ৫০%, মিথেন ২০%, সিএফসি ১০%, নাইট্রোজেন অক্সাইড ১০% এবং অবশিষ্ট ১০% কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন পারঅক্সাইড ও কিছু অন্যান্য গ্যাস থাকে। গ্রিন হাউস হলো পুরু কাঁচের প্রাচীর দ্বারা নির্মিত একটি কাঁচঘর।
বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে গবেষণা করে পরিবেশ দুষণ হওয়া ৮টি শীর্ষ কার্বন নির্গমনকারী খাত চিহ্নিত করেছেন, যেমন-বিদ্যুৎ কেন্দ্র-২১.৩%, শিল্প-কারখানা- ১৬.৮%, পরিবহন- ১৪%, কৃষি উপজাত- ১২.৫%, জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন প্রক্রিয়াজাত ও বিপণন-১১.৩%, আবাসিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম-১০.৩%, ভূমি ব্যবহার ও জৈব জ্বালানি-১০% এবং বর্জ্য নিষ্কাশন ও পরিশোধন-৩.৪%। বিশ্বের সবচেয়ে বেশী নির্গমনকারী দেশগুলো হচ্ছে চীন, আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, ভারত, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ। চীন ও আমেরিকার কার্বন নির্গমনের পরিমাণ মোট নির্গমনের প্রায় ৫০ শতাংশ। নিম্নে বর্ণিত আমাদের করণীয় বিষয়গুলো আলোকপাত করা হলো।
১.বায়ু দূষণ: বাতাসে অক্সিজেন ব্যতীত অন্যান্য গ্যাস ও ধূলিকণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বায়ু দূষিত হয়। পৃথিবীর সব প্রাণী শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। অপর দিকে বৃক্ষরাজি কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ ও অক্সিজেন ত্যাগ করে। পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নির্বিচারে সবুজ বৃক্ষ নিধন করার কারণে বৃক্ষ হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের উচিৎ বেশী বেশী বৃক্ষরোপন করা, ২. পানি দূষণ : পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো সাধারণত জলাশয়ের সাথে যুক্ত থাকার কারণে শহর, হাট-বাজার, বাসাবাড়ির ময়লা-আর্বজনা, বিভিন্ন প্রাণীর মলমূত্র, খাল, বিল ও নদীতে পড়ে পানি দূিষত হচ্ছে। প্রতিটি শিল্পকারখানার সঙ্গে শোধনাগার বা অ্যাফুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক। জাহাজ ভাঙা শিল্পের বর্জ্য ও খনি হতে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ যাতে পানিতে না পড়ে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে, ৩. শব্দ দূষণ : বাস-ট্রাক, রেলগাড়ি, লঞ্চ-স্টিমারের হাইড্রোলিক হর্নের শব্দ, বিমানের বিকট শব্দ, শিল্পকারখানার শব্দ, ইট-পাথর ভাঙার শব্দ, মাইকের শব্দ, পটকার শব্দ, হাটবাজার, যানজট, জনসভায় মানুষের কোলাহলের শব্দ, ঢাক-ঢোলের শব্দ, ঝড়-তুফান, সাইক্লোন, বজ্রপাত ও সমুদ্রের গর্জন শব্দ দূষণ যাতে না হতে পারে তার জন্য উন্নত ব্যবস্থা নিতে হবে, ৪. কৃষি গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ফসলের শীত, তাপ, বন্যা ও লবণসহিষ্ণু নতুন জাত উদ্ভাবন এবং বালাইনাশক ও আগাছানাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি জৈব কৃষির ওপর অধিক জোর দিতে হবে, ৫. নির্বিচারে বন্য ও জলজ প্রাণী শিকার বন্ধ করতে হবে। বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদকে সংরক্ষণের জন্য অভয়ারণ্য, উদ্ভিদ উদ্যান, অভয়াশ্রম, শিকার সংরক্ষিত এলাকা ইত্যাদি সৃষ্টি এবং বন-জঙ্গল, জলাশয়, নদী, সাগর দূষণমুক্ত রাখতে হবে, ৬. পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা ও বিস্ফোরণ ঘটানো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ৭. শিল্পকারখানার সঙ্গে ইটিপি না থাকা দ্বন্ডনীয় অপরাধ। তাই যেসব শিল্পকারখানার সঙ্গে ইটিপি নেই, সেগুলোর ওপর পরিবেশ দূষণের জন্য গ্রিনট্যাক্স বা দূষণকর আরোপ ও ইটিপি স্থাপনে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। ৮. নিয়মিত অরৎ গড়হরঃড়ৎরহম এর মাধ্যমে বায়ুদূষণের উপাদানগুলোর পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। পৃথিবীর পরিবেশ দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ফলে জীবের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। এর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ হারাচ্ছে যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। বস্তুত প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণে সুষ্ঠু নিয়ম মেনে চলা, মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়া, বন-বনানী থেকে বৃক্ষ উজাড় না করা, গগনচুম্বী অট্টালিকা তৈরীর জন্য পাহাড় না কাটা, পশু-পাখি নির্বিচারে শিকার না করা কল-কারখানার বর্জ্য নিষ্কাষণে যথাযথ নিয়ম মেনে চলা, যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং জনসাধারণকে পরিবেশ সম্পর্কে আরো অধিক সচেতন করে তোলা। তাহলেই কেবল সম্ভব সুন্দর পরিবেশের নিশ্চয়তা।
আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে মানুষকে টিকে থাকতে হলে, সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশের নিশ্চয়তা নিজেদেরকেই দিতে হবে। ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলামের অনন্য নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পেয়ে একটি সুস্থ পরিবেশ বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠবে।
মো. ফরিদ হোসেন
দারুণ নাজান সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা, ডেমরা, ঢাকা।
সংস্কার পাঠক ফিচার এর এপ্রিল ২০১৯ সংখ্যার বিষয় “বাংলা নববর্ষ ও আমাদের করণীয়”। এ প্রসংগে আপনার মতামতটুকু পাঠিয়ে দিন আমাদের দপ্তরে। লেখা অবশ্যই পাঠাতে হবে ২৫ জুলাই এর মধ্যে। খামের উপর পাঠক ফিচার লিখতে ভুলবেন না যেনো। - বি.স.