সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-কুরআন

নভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-হাদীস

ওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......

বিস্তারিত পড়ুন

সুদ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীস

 

 . কিন্তু যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃব্যবসা তো সুদেরই মতো অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই নসীহত পৌঁছে যায় এবং ভবিষ্যতে সুদখোরী থেকে সে বিরত হয়, সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়েছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ  হয়ে গেছে আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি আবার এই কাজ করে, সে জাহান্নামের অধিবাসী সেখানে সে থাকবে চিরকাল (বাক্বারা : ২৭৫)

 . আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত বিকশিত করেন আর আল্লাহ অকৃতজ্ঞ দুষ্কৃতকারীকে পছন্দ করেন না (বাক্বারা : ২৭৬)

. হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং লোকদের কাছে তোমাদের যে সুদ বাকি  হয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও, যদি যথার্থই তোমরা ঈমান এনে থাকো (বাক্বারা: ২৭৮)

. কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখো, এটা আল্লাহ তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এখনো তাওবা করে নাও (এবং সুদ ছেড়ে দাও) তাহলে তোমরা আসল মূলধনের অধিকারী হবে তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের ওপর জুলুম করাও হবে না (বাক্বারা : ২৭৯)

 . হে ঈমানদারগণ! চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খাওয়া বন্ধ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে (আল ইমরান : ১৩০ )

 . হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ভাগ্য নির্ণয়ক শরসমূহ- সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকলাপ এগুলো থেকে দূরে থাকো, আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে (মায়িদাহ : ৯০)

পবিত্র কুরআনে বহু ধরনের গুনাহের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে সসবের জন্য কঠোর শাস্তি ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে কিন্তু সূদের ক্ষেত্রে যত কঠোর ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে অন্য কোন গুনাহের ব্যাপারে এমনটি করা হয়নি জন্যই সমাজ রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সূদ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে রাসূলে কারীম সা. সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন উদাহরণ স্বরূপ নাজরানের খৃষ্টানদের সাথে তিনি যে সন্ধিপত্র সম্পাদন করেন তাতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লিখে পাঠান-‘যদি তোমরা সুদী কারবার করো তাহলে তোমাদের সাথে চুক্তি ভেঙ্গে যাবে এবং আমাদেরকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে বনু মুগীরার সুদী লেনদেন সমগ্র আরবে প্রসিদ্ধ ছিল মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ সা. তাদের প্রাপ্য সমুদয় সূদ বাতিল করে দেন এবং মক্কায় তাঁর নিযুক্ত তহসীলদারদেরকে লিখে পাঠান, যদি তারা (বনু মুগীরা) সুদ গ্রহণ করা বন্ধ না করে তাহলে তাদের সাথে যুদ্ধ করো

রিবার অবৈধতা আল-কুরআনের সাতটি আয়াত (বাক্বারাহ ২৭৫-২৭৬, ২৭৮-২৮০; আল-ইমরান ১৩০ এবং রুম ৩৯) এবং চল্লিশটিরও বেশী হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস তুলে ধরা -

() আবু হুরাইরা রাবর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘সুদের (পাপের) সত্তুরটি স্তর রয়েছে যার নিম্নতম স্তর মায়ের সাথে যেনা করার পাপ (সমতুল্য)

() আব্দুল্লাহ ইবনু হানযালা রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি যদি এক দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) রিবা বা সুদ জ্ঞাতসারে গ্রহণ করে, তাতে তার পাপ ছত্রিশবার ব্যভিচার করার চেয়েও অনেক বেশী হয়

() কূফার ক্বাযী খ্যাতনামা তাবেঈ আবু বুরদা বিন আবু মূসা বলেন, আমি মদীনায় এলাম এবং সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন সালাম রা. এর সাথে সাক্ষাত করলাম তখন তিনি বললেন, তুমি এমন এক এলাকায় বাস কর, যেখানে সুদ ব্যাপকহারে প্রচলিত অতএব  যদি কারো নিকট তোমার কোন পাওনা থাকে, আর সে যদি তোমার নিকট এক থলে ভূষি বা যব কিংবা এক আঁটি ঘাসও উপঢৌকন দেয়, তবুও তুমি তা গ্রহণ করো না কেননা ওটা হবেরিবা বা সুদ

() আলী রা. তে বর্ণিত যে,  ‘তিনি রাসূলুল্লাহ সা. কে অভিশাপ করতে শুনেছেন সুদখোরের প্রতি, সুদ দাতার প্রতি, সুদের প্রমাণপত্র লেখকের প্রতি সাদাক্বা প্রদানে বাধাদানকারীর প্রতি আর তিনি নিষেধ করতেন মৃতের  জন্য বিলাপ করা তে

() আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা. বলেন,  ‘সুদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি নিঃস্বতা

উপরোল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে সুদ সম্পর্কে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় সুস্পষ্টভাবে উঠে আসে এসবের মধ্যে রয়েছে সুদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মহাপাপী বলে গণ্য হবে সামান্য বিষয় এমনকি ঋণদাতাকে উপহার প্রদানও সুদ হিসাবে বিবেচিত হবে সুদের শেষ পরিণতি হবে নিঃস্বতা সুদ বহু প্রকারের তে পারে এক সময়ে সুদ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করবে এবং তা থেকে কারো রেহাই থাকবে না সুদের গুনাহ (যা কবীরা গুণাহ) অতীব নিকৃষ্ট ধরনের ইত্যাদি তাই সুদ প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যেমন প্রয়োজন তেমনি সমাজদেহ তে সুদ উচ্ছেদ রহিত করার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণও সমান প্রয়োজন বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর জীবনের  সর্বশেষ ভাষণেও প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে ভুলেন নি তিনি যে প্রকৃতই রাহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণেও তার পরিচয় রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় সেই ভাষণে তিনি একটিমাত্র ঘোষণার মাধ্যমে শোষণের বিষদাঁত চিরতরে ভেঙ্গে দিলেন অবিচল কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘জাহেলী যুগের সমস্ত সূদ বাতিল করা সবার আগে আমাদের গোত্রের আববাস ইবনু আব্দিল মুত্তালিবের সব সুদ আমিই রহিত করে দিলাম

সেই ঘোষণার ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী উমাইয়া আববাসীয় খিলাফত পরবর্তী যুগেও বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশী বিশাল ভূখন্ডে দীর্ঘ নয়শত বছর ইসলামী হুকুমত বহাল থাকাকালীন কোথাও সুদ বিদ্যমান ছিল না সুদের মাধ্যমে কোন লেনদেন ব্যবসা-বাণিজ্য হয়নি পরবর্তীতে মুসলমানদের  ভোগবিলাস আত্মবিস্মৃতির সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় শক্তিসমূহ তাদের পরাভূত করে ধ্বংস করে দেয় তাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ব্যবসা-বাণিজ্য উৎপাদনের উপায়-উপকরণের উপর আধিপত্য বিস্তার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ বিপরীতে মুসলিম দেশ সমাজ কোন প্রতিরোধ তো গড়তে পারেইনি বরং ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ে যোজন যোজন পথ এই সময়েই ইউরোপে সংঘটিত শিল্প বিপ্ল­বের পথ ধরে নতুন আঙ্গিকে সূদ পুনরায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বিশ্বের সকল দেশে, সমাজের সর্বস্তরে ব্যাংকিং পদ্ধতির বিকাশ ঘটে শিল্প বিপ্লবের হাত ধরেই ব্যাংকিং পদ্ধতির মাধ্যমেই সমাজে সূদের সর্বনাশা শোষণ ধ্বংস আরও গভীর ব্যাপ্তি লাভ করে একদিকে পুঁজি আবর্তিত তে থাকে শুধু ধনীদের মধ্যেই, যা পবিত্র কুরআনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে অন্যদিকে সুদের কারণে আরও নতুন নতুন অর্থনৈতিক নির্যাতন শোষণ বিস্তৃতি লাভ করে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে, যার হাত থেকে পরিত্রাণ লাভ আজ আর সহজসাধ্য নয়

[]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৮০৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত /১৯ পৃঃ হা/২৬৮৩

[]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৭৪, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/২৮২৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭০২

[]. মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত হা/২৮২৫, সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭০১

[]. বুখারী, মিশকাত হা/২৮৩৩

[]. নাসাঈ, মিশকাত হা/২৮২৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭০৫, শাওয়াহেদ-এর কারণে হাদীছ ছহীহ

[]. ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৮২৭, সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭০৩, /২৭ পৃঃ

[]. তারীখে ত্ববারী; সীরাতে ইবনে হিশাম

(SOUECS : INTERNET)