সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-কুরআন

নভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-হাদীস

ওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়

ইসলামের চতুর্থ রুকন বা ভিত্তি হচ্ছে হজ্ব। এই হজ্ব সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রসিদ্ধ হাদীসে বলেছেন, "ইসলামকে পাঁচটি স্তম্ভের উপর তৈরি করা হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা এক ও অদ্বিতীয় এ বিষয়ে এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল এ বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়া, নামায আদায় করা, যাকাত আদায় করা, হজ্ব করা এবং রমজান মাসে রোজা রাখা।" (বুখারী ও মুসলিম) একজন মুসলিম এর ওপর হজ্ব করা ফরজ হয় যখন তার এতোটুকু সম্পদ থাকে, যা দিয়ে সৌদি আরবের মক্কা মুকাররমায় অবস্থিত বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর পর্যন্ত যাওয়া ও আসার খরচ সংকুলান করার ক্ষমতা থাকে।
এ ক্ষেত্রে হজ্ব পালনের জন্য বয়স একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হজ্ব ফরজ হওয়ার বিষয়ে পূর্বশর্ত যেমন আর্থিক সঙ্গতি, পাশাপাশি একজন উন্মাদ বা পাগলের উপর হজ্ব ফরয হয় না। একজন নাবালেগ মুসলিমের উপর হজ্ব ফরয হয় না। একজন কাফের, মুরতাদ বা নাস্তিক এর উপর হজ্ব ফরয হয় না। তাহলে একজন মুসলিম, চাই সে নারী হোক বা পুরুষ হোক, সে বালেগ হলেই, আর্থিক সঙ্গতি থাকলে, তার ওপর হজ্ব করা ফরজ। অনেক সময় ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে নিয়ে হজ্বে যাওয়া হয়। এটা তার উপর ফরজ হজ্ব নয়। তাকে হজ্বের কাজে অভ্যস্ত করে তোলার জন্য অথবা কোন নফল হিসেবে হজ্ব আদায় করার জন্য নিয়ে যাওয়াটা বৈধ। আমাদের দেশে হজ্ব ফরয হলেও একটা বড় ধরনের সমস্যা সবসময়ই লেগে থাকে। প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতির মতোই হয়ে গেছে যে, হজ্ব করতে যেতে হবে বৃদ্ধ বয়সে। যখন কোন মুসলিম, ধনী ব্যক্তি তাঁর জীবনের সব কাজ শেষ করে ফেলেছেন বলে মনে করবেন, তার ছেলেমেয়েদের কে বিয়ে-শাদী করাবেন বা দিবেন, তার বয়স বাড়তে বাড়তে ৬০-৭০ এ পৌঁছে গেছে, তখনি যেনো তার জন্য হজ্ব করাটা উপযুক্ত সময়। এই বিষয়টি হচ্ছে প্রচলিত বড় ভুলগুলোর একটি। কারণ হজ্ব ইসলামের একটি ভিত্তিই শুধু নয় বরং এটি একজন মুসলিম নর-নারীর ক্ষেত্রে আর্থিক ইবাদতের মধ্যে গণ্য। একই সাথে শারীরিক ভাবে উপস্থিত হয়ে হজ্ব আদায় করতে হয় বলে এটি শারীরিক ইবাদতের মধ্যেও গণ্য। অনেকে হজ্ব করার কথা বললে, বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে এ কথাটি অনেকের মুখেই শোনা যায় যে, এত তাড়াতাড়ি হজ্ব করলে হজ্ব কি রাখা যাবে? এর মানে হচ্ছে যখন সে যৌবন কালে হজ্ব করবে, হজ্ব থেকে ফেরার পর, তার সগিরা বা কবিরা গুনাহ করার আশা-আকাঙ্খা করতে পারে, বেশি বেশি ভুলে নিমজ্জিত হয়ে যেতে পারে, যার ফলে যৌবন কালে হজ্ব করাকে সে ভয় পায়। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশনা হচ্ছে যৌবন কালের ইবাদত আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। কিয়ামত দিবসে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিতে কোন মানুষের পা নড়বে না। সেই পাঁচটি প্রশ্নের মধ্যে একটি হচ্ছে "তার যৌবন কাল কিভাবে সে অতিবাহিত করেছে"। এই যৌবনকালে যে ইবাদত বন্দেগী ইত্যাদি করা হয় সেগুলো যথাযথভাবে করার চেষ্টা করা হলে তা সম্ভব। যা বৃদ্ধ বয়সে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এছাড়া বাস্তবিক ভাবে বিচার করতে গেলে দেখা যাবে, আমাদের দেশের যেসব হাজী বাইতুল্লাহ শরীফে হজ্বের নিয়তে যাচ্ছেন, তারা হজ্ব করতে গেলে যেই আনুষ্ঠানিকতা রযেছে, যে পরিশ্রম রয়েছে, যে স্থানগুলোতে যাওয়া-আসার ব্যাপার রয়েছে, এসব সঠিকভাবে নিজের পক্ষ থেকে করতে পারেন না। তখন অপারগ ব্যক্তির মতই তার সকল কাজ অথবা যে যে কাজ গুলো অন্য কাউকে দিয়ে করানো সম্ভব, সেগুলো কাউকে দিয়ে করিয়ে নিতে হয়। এতে হজ্বের যেই প্রকৃত স্বাদ সেটি তার আস্বাদন করা হয় না। শক্তি এবং সামর্থ্য দু'টোই দরকার হজ্ব এর মত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এই ভিত্তিটি পালন করার জন্য। আর এই কথাটি ইতিমধ্যে যারা হজ্ব করে এসেছেন, তাদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করলে সকলের কাছেই সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। কিছু কিছু দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, তারা বিয়ে-শাদী পর্যন্ত হজ্ব করার আগে করে না। ইন্দোনেশিয়া কিংবা মালয়েশিয়া এর মত মুসলিম দেশগুলোতে এই বিষয়টি অপরাপর আমাদের সবাই জানেন, যে কোন একটি মেয়ে অথবা কোন একটি ছেলের মধ্যে বিয়ে-শাদী হবেনা যদি তারা হজ্ব না করে থাকেন। অবশ্য এটি বাধ্যবাধকতার বিষয় নয়। সামাজিকভাবে ধর্মীয় বিষয়টিকে তারা গ্রহণ করে নিয়েছেন। তারপরও এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে। কিন্তু পাক-ভারত উপমহাদেশে হজ্বের বিষয়টি এলে সামর্থ্য ও শক্তি থাকা সত্ত্বেও যুব শ্রেণীর হজ্ব ফরজ হওয়া মুসলিমরা, তাদের এই ভিত্তিটি পালন করেন না। কোন কোন অজুহাত দিয়ে এটাকে পিছানোর চেষ্টা করেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই হজ্ব নিয়ে আমি যে বিলম্ব করছি, আমার কি এমন নিশ্চয়তা আছে, যে আগামী বছর বা তার পরের বছর বা দশ বছর পরে আমি হজ্ব করতে পারব। আমি যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারি। তাই এই হজ্ব নিয়ে এমনিভাবে কালক্ষেপণ না করে যথা সময়ে হজ্ব ফরজ হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা উচিত। হজ্বের ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআন কারীমে শক্ত ভাষায় বলেছেন, "মানুষের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে বাইতুল্লাহ এর হজ্ব করার যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের উপর ফরজ। যেই ব্যক্তি এই বিষয়টি অস্বীকার করবে (তাদের জেনে রাখা উচিত) নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা বিশ্ব থেকে অমুখাপেক্ষী।" (আল ইমরান ৯৭) অতএব হজ্বের প্রসঙ্গ এলে আমাদেরকে সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে, হালাল ভাবে অর্জিত পয়সা দিয়ে, যাদের ওপর হজ্ব ফরজ হয়েছে, তাদের হজ্ব আদায় করে নেয়া উচিত। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে তার হজ্ব, বাইতুল্লাহ এর জিয়ারত, কাবা শরিফের তাওয়ফ, আরাফার ময়দানের উপস্থিতি, মুজদালিফায় রাত্রি যাপন এবং মিনায় অবস্থান করে কুরবানী ও পাথর নিক্ষেপ এর মাধ্যমে হজ্বব্রত পালন করার তাওফিক দিন। আমীন।