সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......
বিস্তারিত পড়ুননভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......
বিস্তারিত পড়ুনওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......
বিস্তারিত পড়ুন(ডিসেম্বর ২০১৮ সংখ্যার পর) লা মাযহাবির পক্ষ থেকে আর একটা প্রশ্ন করা হয়, ইমামগণ সাধারণ মানুষ; তারা তো নবী না। আর সবাই একমত যে নবী ছাড়া প্রতিটি মানুষ যত বড়ই ইমাম হোক সবাই সঠিক করতে পারে আবার ভুল করতে পারে। তাই আমি এমন একজন মানুষকে কিভাবে মানবো যে সঠিক করতে পারে আবার ভুল করতে পারে। ইমামকে মানা ওয়াজিব করে দেওয়া মানে একটা ভুল কাজ মানা ওয়াজিব করে দেওয়া। তাই আমি কেন ঐ ইমামকে মানব যে ভুল করতে পারে? আমি কেন সরাসরি সে রাসূল সা. কে মানবো না যিনি কখনো ভুল করেন না।
এ বিভ্রান্তির উত্তরে সমাধান হল: আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূল কে মান্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বশীল তাদেরকে মান্য কর। এখানে আবার অনেকের ফালতু প্রশ্ন আছে, মাযহাব মানা হল আল্লাহর সাথে শরীক করা। কারণ তাওহীদ হল একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে মান্য করা। এটা ফালতু প্রশ্ন, কারণ সে ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে রাসূল সা. কে মানলেও শিরক হবে। অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা আল্লাহ এবং আল্লাহর সাথে রাসূল সা. কে মান্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বশীল তাদেরকে মান্য কর। এভাবে স্পষ্ট করে আল্লাহ বলছেন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলকে মান এবং তোমাদের অভিভাবককে মান। এখানে অভিভাবককে মানার কথা বলা হয়েছে আর তাই ইমামগণকে মানা অর্থই হল, আল্লাহর তায়ালার আদেশ মান্য করা। এখানে উল্লেখ্য যে, অভিভাবককে মানতে হলে অবশ্যই আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলকে মানার মাধ্যমেই মানতে হবে। যদি আল্লাহ এবং রাসূল সা. এর নির্দেশনার আলোকে অর্থাৎ কুরআন ও হাদীসের আলোকে অভিভাবক বা ইমামকে মানা হয় তাহলে যেন কুরআন ও হাদীস মানল এবং আল্লাহর আদেশ পালন করল। আর মাযহাবের অনুসারীগণ কেউ ইমামগণকে তাদের চেহারা দেখে মানে না। বরং তারা তাদেরকে মানার মাধ্যমে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলকে মানছে এই কথা বিশ্বাস করেই তাদেরকে মানে। আরেকটি বিভ্রান্তি হল, “হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বলেন, তোমাদের কেউ তার ধর্মকে অন্যের ঘাড়ে তুলে দিবে না। যদি সে মুমিন হয় তবে মুমিন হবে আর সে কাফির হলে সেও কাফির হবে। কারণ খারাপ বিষয়ে কোন অনুকরণ নয়। আবি রাবিয়া বলেন, মানুষ তাদের আলেমগণের কাছে শিশুরা তাদের বড়দের কোলে থাকার মত। যদি তারা আদেশ করে তবে তারা করে আর যদি তারা নিষেধ করে তবে তারা বিরত থাকে। ওবাইদুল্লাহ ইবনুল মো’তাজ বলেন, যে মানুষ অনুকরণ করে তার মাঝে আর অনুকরণকারী পশুর মাঝে কোন পার্থক্য নেই । হযরত শাফেয়ি রাহ. বলেন, আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সা. এর হাদীস ছাড়া কোন মানুষের কথা মানা আবশ্যকিয় নয়। ইমাম মালেক রাহ. বলেন, নবীর পরে কোন মানুষ এমন নেই যে, যার কথা মানতেই হবে এবং তা ত্যাগ করা যাবে না। ইমাম আবু হানিফা রাহ. বলেন, কারো জন্য আমার কথা গ্রহণ করা বৈধ নয় যতক্ষণ না সে জানবে, আমি কোথা থেকে তা গ্রহণ করেছি। ইামাম আবু হানিফা রাহ. আরো বলেন, আমার অনুসরণ কর না বরং আমি যেখান থেকে অর্থাৎ কুরান এবং হাদীস থেকে মাসআলা নেই তোমরা তার অনুসরণ কর। যখনি আমার কোনো মতামত কুরআন হাদীসের বিরুদ্ধে পাবে, তখন আমার মতামত বাদ দিবে এবং কুরআন হাদীস আকড়ে ধরবে। ইমাম আহমাদ রাহ. বলেন, তোমরা আমার অনুকরন কর না। তোমরা মালেক, শাফেয়ি, সাওরী ও আওজায়ি কাউকে অনুসরণ কর না। বরং যেখান থেকে তারা গ্রহণ করেছে সেখান থেকে তোমরা গ্রহণ কর ।
এ সকল উক্তির মাধ্যমে প্রমাণীত হয় যে, মাযহাবের ইমামগণই তাদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। তারা বলেছেন, তাদের অন্ধ অনুসরণ চতুস্পদ জন্তুর মত; তারপরও কেন আমরা তাদের অনুসরণ করব? কেন আমরা কুরআন- হাদীস বাদ দিয়ে মাযহাব অনুসরণ করব”?
এর উত্তরে ইমাম ইবনু আব্দুল বার বলেন, মাযহাবের ইমামগণের এ সকল উক্তিগুলো জ্ঞান অন্বেষণকারী ছাত্র ও আলেমগণের জন্য, সাধারণ মানুষদের জন্য নয়। কারণ সাধারণ মানুষকে তাদের ইমামগণ ও আলেমগণকে মানতে হবে। কারণ তারা কুরআন- হাদীসের ব্যাখ্যা ভালভাবে বুঝবে না। ওলামাগণ কেউ দ্বিমত করেনি যে, সাধারণ মানুষকে মাযহাবের অনুসরণ করা ওয়াজিব। আর সাধারণ অনুসরণকারীগণের ক্ষেত্রেই আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি তোমরা না জান তবে জ্ঞানীগণের কাছে জিজ্ঞাসা কর। অতএব মাযহাবের ইমামগণের দলিল ছাড়া অনুসরণ না করার আদেশ হল তাদের ছাত্রদের জন্য; যারা কুরআন-হাদীস গবেষণা করে মাসআলা বের করতে পারবে। আর সকল ইমামগণের ছাত্ররা এমনটিই করেছেন। এর প্রমাণ¯রূপ:
হানাফি মাযহাবে যোহরের নামায কখন শেষ হয় আর আসরের নামায কখন শুরু হয়? এ বিষয়ে চার মাযহাবের মধ্যে বিতর্ক আছে। আপনারা দেখছেন হয়তবা, যারা লা মাযহাবী তারা আসরের নামাযের আজান সাড়ে তিনটার সময় দেন। শাফেয়ি মাযহাব সহ অন্য মাযহবের মতে সূর্যের আলোতে কোন বস্তুর ছায়া একবার পরিমাণ হয় অর্থাৎ আনুমানিক সাড়ে তিনটার সময় যোহরের নামায শেষ হয় আর আসরের নামায শুরু হয়। হযরত ইমাম আবু হানিফা রাহ. এর মাযহাব হল সুর্যের ছায়া কোন বস্তুর ছায়া দুইবার পরিমাণ হলে অর্থাৎ আনুমানিক পাচটার সময় যোহরের নামায শেষ হয় আর আসরের নামায শুরু হয়। কিন্তু হযরত আবু হানিফা রাহ. এর ছাত্রদ্বয় হযরত ইমাম হাসান এবং আবু ইউসুফ রাহ. কুরআন হাদীস নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন যে ইমাম আবু হানিফার এই কথাটা সঠিক না। তাই অন্যান্য ইমামগণের মত তারা এ মত প্রদান করেছেন যে, সুর্যের আলোতে কোন বস্তুর ছায়া একবার পরিমাণ হয় অর্থাৎ আনুমানিক সাড়ে তিনটার সময় যোহরের নামায শেষ হয় আর আসরের নামায শুরু হয়। তবে অন্যান্য হানাফি গবেষকগণ হযরত ইমাম হাসান এবং আবু ইউসুফ রাহ. এর মত ত্যাগ করে হযরত আবু হানিফা রাহ. এর মত “সুর্যের আলোতে কোন বস্তুর ছায়া দুইবার পরিমাণ হলে অর্থাৎ আনুমানিক পাঁচটার সময় যোহরের নামায শেষ হয় আর আসরের নামায শুরু হয়” কে গ্রহণ করেছেন । তাদের মতের উপরেই ফতোয়া এবং বর্তমানেও আমরা এবং হানাফি মাযহাবের সকলে এটাই মান্য করছে।
উপরন্ত লা মাযহাবিগণের গুরু ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহ. বলেন, সকল ইমামগণের মত হল, সকলের জন্য ইজতিহাদ ও তাকলিদ উভয়ই জায়িজ। যে আলেম ইজতিহাদ করতে পারে তার জন্যও তাকলিদ বা অন্যের অনুসরণ করা বৈধ। কারণ তার কাছে হয়ত প্রমাণ বিশ্লেষণ স্পষ্ট নয় বা গবেষণা করার সময় নেই ইত্যাদি । ইমাম শাতেবী বলেন, যদি সাব্যস্ত হয়, সত্যই গ্রহণযোগ্য তবে সত্য আলেমদের মাধ্যম ছাড়া পাওয়া যাবে না; বরং তাদের মাধ্যমে সে সত্যের কাছে পৌঁছানো যাবে এবং তারাই সত্যের পথ প্রদর্শক । আল্লামা ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম রাহ. বলেন, সাধারণের দায়িত্ব হল অনুসরণ করা; কারণ তারা গবেষণা করে সত্যের কাছে পৌঁছতে অক্ষম । মিশরের ইফতা বোর্ড লেখে, ইজহিতাদ সকলের পক্ষে সম্ভব না। যেমন ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারিং, ওকালতি ইত্যাদি প্রতিটি মানুষের দরকার। কিন্তু সকল মানুষ এর জন্য এ সকল বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করা সম্ভবও না ও কেউ সব বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করার কথাও বলে না। তবে কুরআন-হাদীসের বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন সকলের জন্য কিভাবে সম্ভব ও এ কথা কিভাবে বলা হয় ?
লা মাযহাবিগণের পক্ষ থেকে আর একটা প্রশ্ন করা হয়, আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আপনার আগে যত এলাকায় যত সতর্ককারী রাসূল সা. পাঠিয়েছি তখন সে এলাকার অহংকারিরা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এর উপরে পেয়েছি এবং তাদের অনুসরণ করব। তারা (রাসূলগণ) বলতেন, তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাকে যার উপর পেয়েছো তার চেয়ে সঠিক পথ যদি আমি আনি তাহলে কি করবে? তারা বলে, তোমাকে যা নিয়ে পাঠানো হয়েছে তা আমরা অস্বীকার করি। অতপর আমি তাদের প্রতিশোধ নিয়েছি”। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যখন তাদেরকে (কাফের) বলা হয়, আল্লাহ যা অবতরণ করেছেন তোমরা তার অনুসরন কর তখন তারা বলে, আমরা তা অনুসরণ করব যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি”। অতএব কুরআন- হাদীস বাদ দিয়ে মাযহাবের ইমামগণকে মানা হল বাপ-দাদাকে মানা; যে ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট নিষেধ করেছেন এবং শাস্তির হুমকি দিয়েছেন।
এর উত্তরে বলা যায়, এখানে যেটা নিষেধ করছেন সেটা হল কুরআন-হাদীস বা ইসলামের মূলনীতি বিরোধী স্পষ্ট ভুল জিনিসের অন্ধ অনুসরণ করা। যেমন আয়াতে কাফেরদের পিতা মাতা কুফুরীরর উপরে থাকা একটা স্পষ্ট ভুল বিষয়। এরকম স্পষ্ট ভুল এর অন্ধ অনুসরণ করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। যারা মাযহাব মানেন তাদের কেউ এ কথা বিশ্বাস করে না যে, আমরা যে মাযহাব মানছি তা বেঠিক। তারপরও আমরা মানছি কারণ এটা আমার দলের মত; এরকম অন্ধ দলবাজির মনোভাব কারো মধ্যে নেই। বরং সবাই তাদের মাযহাব কুরআন-হাদীস এর বেশী সঠিক ব্যাখ্যার আলোকে প্রতিষ্ঠিত বলেই বিশ্বাস করে।
আরেকটি বিভ্রান্তি হল, কেন চার মাযহাব? কেন নামাযের ক্ষেত্রে চার মাযহাবের সবাই আলাদা আলাদা। এরকম সবাই বিভক্ত না হয়ে বরং সবাই এক প্লাটফর্মে চলে আসলে তো ভাল।
এর উত্তর হল, আল্লাহর রাসূলের সা. স্পষ্ট হাদীস হল, যখন কেউ গবেষণা করবে আর গবেষণা করে যদি সঠিক করে তাহলেও সঠিক এবং দু’টি সাওয়াব পাবে। আর যদি ভুল করে তা হলেও সঠিক এবং একটি সাওয়াব পাবে । এ কারণে ইমামগণ বলেন, কোন ইমাম যদি গবেষণা বা ইজতিহাদ করে আর কুরআন-হাদীসের আলোকে যে গবেষণা করেছে তা যদি ভুল হয় তারপরও সে মুজতাহিদের জন্য তা মান্য করা ওয়াজিব। কারণ আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সত্য মানার আদেশ করেছেন। আর সকল গবেষকের পক্ষে সর্বদা সত্যের কাছে পৌঁছা সম্ভব না ও হতে পারে। তাই আল্লাহ তায়ালা গবেষণা করার আদেশ করেছেন এবং তার গবেষণা মত আমল করার আদেশ করেছেন। চাই সেটা সঠিক হোক বা বেঠিক। যেমন জঙ্গলে থাকা ব্যক্তিগণ যাদের কাছে কেবলা অস্পষ্ট তাদের মাসআলা । এ কারণে সকল আলেমগণ বলেন, সকল মাযহাব সঠিক। কারণ প্রত্যেক ইমাম কুরআন-হাদীসের আলোকে যে ব্যাখ্যা পান সেটাই তাদের কাছে কুরআন-হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা। অতএব সকলে কুরআন-হাদীসের আলোকে সত্যের অনুসরণ করছেন। কারো সমালোচনা করা বা কাউকে ভুল বলা বৈধ নয় ।
বরং বিভিন্ন মাজহাবে বিভক্ত হওয়াটাই বরং কাম্য। ইবনু আরাবী বলেন, আলেমগণের মতভেদ সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত, সুযোগ ও সহজ বিধানের পথ । হযরত ওমর বিন আব্দুল আজিজ রাহ. বলেন, আমি চাই না, সাহাবাগণ মতভেদ না করুক। কারণ যদি একটিই মত হত তবে মানুষ সংকির্ণতার মধ্যে পতিত হত। এখন যদি তাদের কারো একজনের মত গ্রহণ করে তবে তার জন্য একটা সুযোগ। (ক্রমশ:)