সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-কুরআন

নভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-হাদীস

ওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়

করোনা মহামারীর একটি বছর পেরিয়ে গেল। আমাদের সামনে থেকে আরেকটি সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথে আমরা একটি বছরকে কালের অতল গহব্বরে নিক্ষেপ করলাম। আমাদের সামনে জড়া আর জীর্ণতা ধুয়ে-মুছে আরেকটি নতুন সকালে উদিত হল ১৪২৮ বঙ্গাব্দের প্রথম সূর্য। চৌদ্দোশো সাতাশ সালের বারটি মাস আমরা ডুবে ছিলাম কোভিড-১৯ নামক মহামারীর কালো প্লাবনে। শুধু আমাদের মাতৃভূমি এই বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীর সকল দেশেই ছোবল মেরেছে এই মহামারী। সকলের জীবন থেকে চলে গেছে একটি বছর। কেউবা অলস প্রকৃতিতে কাটিয়েছে বছরটি। কেউবা যুদ্ধ-বিগ্রহে, কেউবা অনাহারে-অর্ধাহারে শরণার্থী শিবিরে, আবার কেউবা অভাব-অনটনে কাটিয়েছে বছরটি। কেউবা কর্ম হারিয়েছে, বেতন হারিয়েছে, বোনাস হারিয়েছে, চাকরি হারিয়েছে, সর্বস্বান্ত  হয়ে প্রকৃতির কাছে হেরে গিয়ে নতুন একটি সুন্দর জীবনের আশায় ঘর বেধে বসে আছে। বিগত একটি বছরে আমরা আমাদের সমাজের অনেককেই হারিয়েছি। হারিয়েছি অনেক রাজনীতিবিদকে, সমাজের অনেক মহীয়ান-মহীয়সী সদস্যকে হারিয়েছি, প্রবীণ-নবীণকে হারিয়েছি, বাবা মাকে হারিয়েছি, ভাই-বোনকে হারিয়েছি, অন্তরের অন্তস্থল থেকে যাদেরকে ভালোবাসতাম সেই রকম বন্ধুদেরকেও হারিয়েছি। আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনা, আল্লাহ যেন সবাইকে আখেরাতে শান্তিতে রাখেন, ক্ষমা করে দেন। শুধু কি আমরা প্রিয় জনকেই?  হারিয়েছি? না। আমাদের কোমলমতি শিশু থেকে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা হারিয়েছে তাদের একটি বছর। এই এক বছরে তাদের উপর দিয়ে বয়ে গেছে নতুন ঝড়। সংকুচিত হয়েছে সিলেবাস। পরিবর্তিত হয়েছে পড়াশোনার ধরন। কেউবা ডুবে গেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে, কেউবা অভিনয় করেছে পড়শোনার নাম দিয়ে, কেউ বা মত্ত হয়ে গেছে অনলাইন গেইমে, তাদের অনেকেই মেধার বিকাশ এর পরিবর্তে হতাশায় ভুগছে, অনেকেই আপতিত হয়েছে মনোরোগের, অনেক ছাত্রছাত্রী হতাশায় ভুগছে। এই একটি বছরে মহামারীর কবলে পরে তছনছ হয়ে গেছে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন। দেশের সরকারের পক্ষ থেকে, ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনকে এসাইনমেন্ট এর মাধ্যমে মূল্যায়ন করে, অনলাইন ক্লাস এর মাধ্যমে কিছুটা চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করে, অটোপ্রমোশনের মাধ্যমে একটি ক্লাস থেকে আরেকটি ক্লাসে উত্তীর্ণ করা  হয়েছে। অটোপ্রমোশন হল কিন্তু কি পেল আমাদের শিক্ষার্থীরা? তাদের মেধা কি বেড়েছে? তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক আচরণ কি বেড়েছে? তাদের আচার-আচরণ কি পরিবর্তিত হয়েছে? তারা কি আদর্শ ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে তৈরি হচ্ছে? এমনি হাজার প্রশ্ন অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ভাবুকদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, "নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব ভয় দিয়ে, ক্ষুধা দিয়ে, সম্পদ কমিয়ে দিয়ে, কোন কোন প্রাণ সংহার করে এবং শস্য ও ফল-ফলাদি কমিয়ে দিয়ে-নষ্ট করে। তবে সুসংবাদ দাও তাদের জন্য, যারা ধৈর্য্য ধারণ করেছে, এবং যারা বিপদ আপদ বালা মুসিবতে পতিত হলে বলে-আমরা তো আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছি এবং তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।" (সূরা বাকারা)

অর্থাৎ করোনা মহামারীর ফলে আমাদের কাউকে আমরা হারিয়ে ফেলি, সময় নষ্ট করে ফেলি, ব্যবসা-বাণিজ্য নষ্ট হয়ে যাক না কেন, অথবা যে কোন বিপদ আসুক না কেন, চাকরি-বাকরি হারাই না কেন, সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। দেখার বিষয়, আমরা কারা কারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ  হয়েছি বা হচ্ছি। আমাদের কারা এই পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পেরেছি, আর কারা অসফল  হয়েছি। আমরা যতটাই ধারণা করি না কেন, আল্লাহর প্রকৃতি তার গতিতেই চলে। আমরা হাজার চেষ্টা করেও আল্লাহর শাস্তি ফেরাতে পারছিনা। যেসব অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতন করলে দুনিয়াতে বিপর্যয় নেমে আসবে, আল্লাহর গজব নেমে আসবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি ব্যাপকভাবে প্রদান করা হবে, সেসব অন্যায়ের কোনোটিই বাকি নেই যা আমরা করছি না। এবছর এক বৈশাখ উপলক্ষে যে বেলেল্লাপনাগুলো হত, করোনা মহামারীর কারণে তা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাচ্ছি চাারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে, আমাদের সমাজে প্রতিটিক্ষণে অন্যায় হচ্ছে, তা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। সমাজকে কলুষমুক্ত করতে হবে। সমাজ থেকে সুদ-ঘুষ-ব্যভিচার, হত্যা-রাহাজানি-চুরি বন্ধ করা, বিশেষ করে আল্লাহর হক বা অধিকার এবং বান্দার হক ও অধিকার যাতে সঠিকভাবে আদায় করা হয় সেদিকে আমাদের সর্বস্তরের মানুষকে দৃষ্টি দিতে হবে। আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, "জলে-স্থলে ফাসাদ ব্যাপকতা লাভ করেছে, যা হচ্ছে মানুষের নিজের হাতের কামাই।" অর্থাৎ মানুষের অর্জিত বা কৃত অন্যায়ের শাস্তি স্বরূপ, জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে আল্লাহর গজব নাজিল হয়। অতএব আমরা যদি আল্লাহর এই গজব মুক্ত থাকতে চাই, আমরা যদি পৃথিবীতে শান্তিতে বসবাস করতে চাই, ফিরে আসতে হবে আমাদের সকলকে আল্লাহর পথে। হে আল্লাহ! আমরা তওবা করছি, তোমার দরবারে ফিরে আসছি, তুমি আমাদের তোমার সান্নিধ্যে ফিরিয়ে নাও। আমাদের অমার্জনীয় পাপরাশি ক্ষমা করে দাও। আমীন! ইয়া রাব্বাল আলামীন!