সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......
বিস্তারিত পড়ুননভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......
বিস্তারিত পড়ুনওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......
বিস্তারিত পড়ুন
ফেব্রুয়ারী মাস এলেই আমাদের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রাণে উচ্ছ্বলতার দোলা লাগে। একুশ, এই ফেব্রুয়ারী মাসের মর্যাদা হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ মাসের ২১ তারিখ, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রাণের মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর এমন কোন দেশ ছিল না যে দেশের মানুষ তার মাতৃভাষাকে মর্যাদার আসনে বসানোর জন্য আত্মোৎসর্গ করেছিল; সেটা কেবলমাত্র এই ভূ-খন্ডের তরুণ প্রজন্মই প্রমাণ করতে পেরেছিল যে, মায়ের ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিতে প্রস্তুত। শুধু প্রস্তুত নই, বরং মায়ের ভাষার জন্য আমরা শাহাদাতও বরণ করেছি। সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে, যারা শাহাদত বরণ করেছিলেন, তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারী, ভাষা শহীদদের স্মরণে, রক্তিম সূর্য হয়ে হাতছানি দেয়। পাশাপাশি প্রচেষ্টা চলতে থাকে এই ভাষা দিবসকে বাংলাদেশের গণ্ডী থেকে বিশ্ব ব্যাপী সমপ্রসারণের জন্য। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক এই দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘের ইউনেস্কো থেকে যখন এ ঘোষণা দেয়া হলো, তারপরে এই ভাষা দিবস কিংবা শহীদ দিবস, শুধুমাত্র বাংলাদেশী মানুষের অথবা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো না, বরং তা জাতিসংঘের মাধ্যমে প্রতিটি দেশের মাতৃভাষার সাথে যুক্ত হয়ে গেল। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাধ্যমে, প্রতিটি দেশ তার মায়ের ভাষার মর্যাদা নিয়ে কথা বলার জন্য, বিশেষ একটি দিনও পেল, গৌরবান্বিত ইতিহাস পর্যালোচনার সুযোগ পেল। মাতৃভাষা নিয়ে বাংলাদেশেই যেহেতু আন্দোলন হয়েছিল সেহেতু এর জন্মভূমি হিসেবে বাংলাদেশেই ২০০০ সালের মাঝামাঝিতে একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে, একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এর অবকাঠামো তৈরীর সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। শুরু হলো বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এর পথচলা। তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান এর উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ তলা বিশিষ্ট এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন করেন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শিল্পকলা একাডেমীর পাশে সেগুনবাগিচায় এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এর স্থান নির্বাচন করা হয়। দেশের সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। ১২ তলা বিশিষ্ট মেগা প্রকল্প থেকে ৫ তলা বিশিষ্ট অবকাঠামো তৈরীর সিদ্ধান্ত হয়। সর্বশেষ ২০০৪ সালে সংশোধিত আকারে তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবন তৈরীর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু হয়, যাতে দ্রুত এই ইনস্টিটিউটের ভবন তৈরীর কাজটি সমাপ্ত করা যায়। শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালে এসে এই ভবনটির কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়। মূল ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন এর নয় বছর পর ২০১০ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটি উদ্বোধন করেন। একই বছর সংসদে যে আইনগুলো অনুমোদিত হয়, তার মধ্যে ৫৯ নম্বর আইনটি হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আইন ২০১০। মোট ২৩ টি ধারা এই আইনে সংযুক্ত হয়। এতে এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এর পরিচয়, কেন এটি তৈরী করা হলো, তৈরি করার প্রেক্ষাপট, এর কার্যপদ্ধতি কি থাকবে, অবসায়ন যদি হয় তাহলে কিভাবে হবে, সবকিছুই এ ২৩ টি ধারার মধ্যে বিস্তাারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এসব হলো কাগজে পত্রের উন্নয়ন এবং যা কিছু প্রয়োজন ছিল সেগুলোর বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সেই ২০০০ সাল অথবা ২০০৪ সাল যেটাই আমরা ধরি না কেন, ২০ বা ২১ বছর পরে এসেও আমাদের বাংলাদেশের মানুষ এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে না বা জানার আগ্রহ প্রকাশ করে না। আমরা পরীক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এর ওয়েবসাইটে ঢুকেছিলাম কিন্তু সেখানে ওয়েবসাইটের অনেকগুলো সেকশনই নিস্ক্রিয় অথবা ইনকমপ্লিট রয়েছে। যদিও এই ইনস্টিটিউট গঠনের উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে যে, বিশ্বের ভাষাগুলোর বিষয় নিয়ে গবেষণা করা হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাষাগুলো নিয়ে গবেষণার তেমন কোন চিত্র আমাদের কাছে নেই। পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষা প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা দেয়ার জন্য এর বিভিন্ন ক্লাসরুম থাকা সত্তে¡ও সেগুলো নিয়ে তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এর ব্যাপারে আমাদের কি তাহলে কোনো আগ্রহ নেই, নাকি অনাগ্রহই কাজ করছে? বিষয়টি খুবই বেদনার। এখানে যাদের অবহেলার কারণেই আমরা এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এর সার্বিক কল্যাণ, আমাদের উপযোগী করে গ্রহণ করতে পারছি না, তাদের সকলেরই এই পিছুটান ছেড়ে এগিয়ে আসা দরকার। আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে আরো সুন্দর দেখতে চাই, ফুলে-ফলে বিকশিত একটি বটবৃক্ষ হিসেবে দেখতে চাই, আমাদের এ দেশের মানুষ, এদেশের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে তাদের মায়ের ভাষার ইতিহাস, এর পাশাপাশি বিশ্ববাসীর মাতৃভাষা সম্পর্কে জানতে পারে, মাতৃভাষা নিয়ে গবেষণা করতে পারে, মাতৃভাষা নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে, সেই সুযোগ যেন তারা পায়, সে ব্যবস্থা আমাদের করে দিতে হবে। এই মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এর দায়িত্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট যেসব দায়িত্বশীল রয়েছেন, তাদের সকলের প্রতি আবেদন, আপনারা আপনাদের আন্তরিকতা সবটুকু ঢেলে দিন, অন্ততপক্ষে জাতির পরবর্তী প্রজন্মের কাছে একটি কর্মক্ষম, কর্মব্যস্ত, উৎপাদনশীল ইনস্টিটিউট হিসেবে এই ইনস্টিটিউটকে যাতে আমরা দেখতে পারি, সেই প্রত্যাশা প্রতিটি বাংলাদেশীর, তথা প্রতিটি মাতৃভাষা প্রেমির।