সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-কুরআন

নভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-হাদীস

ওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......

বিস্তারিত পড়ুন

অহংকার ও আত্মতৃপ্তি

মূল: মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

অনুবাদ: যাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
(মে-জুন সংখ্যার পর)           

তারপর যখন লোকটি দুনিয়াতে বসবাস করতে থাকে তখন সে তার নিজের ইচ্ছায় বেঁচে থাকতে পারে না, সে যে রকম চায় সবকিছু তার মনের মত হয় না। সে চায় সুস্থ থাকতে কিন্তু পারে না, চায় ধনী ও অভাব মুক্ত থাকতে কিন্তু তা হয় না। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার ওপর বিপদ-আপদ আসতেই থাকে। সে পিপাসিত, ক্ষুধার্ত ও অসুস্থ হতে বাধ্য হয়, কোনো কিছু তাকে বিরত রাখতে পারে না। কোনো কিছু মনে রাখতে চাইলে সে পারে না, ভুলে যায়। আবার কোনো কিছু ভুলতে চাইলে তা ভুলতে পারে না এবং কোনো কিছু শিখতে চাইলে তা শিখতে পারে না। মোট কথা, সে একজন অধীনস্থ গোলাম, সে তার নিজের কোনো উপকার করতে পারে না, আবার কোনো ক্ষতিকে সে নিজের থেকে প্রতিহত করতে পারে না। নিজের কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না এবং কোনো অকল্যাণ বা ক্ষতিকে ঠেকাতে পারে না। এর চেয়ে অপমানকর আর কি হতে পারে, যদি সে নিজেকে চিনতে পারে!
তারপর সর্বশেষ অবস্থা ও পরিণতি হলো মৃত্যু। মৃত্যু তার জীবন, শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টিকে কেড়ে নিবে। আর কোনো কিছু দেখতে পারবে না, শুনতে পারবে না। তার জ্ঞান, বুদ্ধি শক্তি ও অনুভূতি আর অবশিষ্ট থাকবে না। বন্ধ হয়ে যাবে তার দেহের নড়াচড়া ও অনুভূতি, সে একেবারেই নিস্তেজ ও জড় পদার্থে রূপান্তরিত হবে, যেমনটি সৃষ্টির প্রথমে ছিল। তারপর তাকে মাটিতে পুঁতে রাখা হবে। তখন সে হয়ে যাবে দুর্গন্ধযুক্ত অপবিত্র লাশ। তারপরও যদি এই হত তার শেষ পরিণতি এবং এ অবস্থার ওপর যদি শেষ হত সব কিছু! আর যদি জীবিত করা না হত! কিন্তু না, এতো শেষ নয় বরং শুরু। চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়ার পর তাকে আবারো জীবিত করা হবে, যাতে তাকে কঠিন বিচারের সম্মুখীন করা যায়। তাকে তার কবর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হবে কিয়ামতের ভয়াবহতায় ও উত্তপ্ত মাঠে। তারপর তার কর্মের দফতর আমলনামা তার সম্মুখে খুলে দেওয়া হবে আর তাকে বলা হবে, তুমি তোমার কর্মের দফতর পড়। আল্লাহ তা‘য়ালা বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আর আমরা প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার ঘাড়ে সংযুক্ত করে দিয়েছি এবং কিয়ামতের দিন তার জন্য আমি বের করব একটি কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। পাঠ কর তোমার কিতাব, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশকারী হিসেবে যথেষ্ট”। (আল-ইসরা : ১৪)
যখন সে তার আমল নামা প্রত্যক্ষ করবে, তখন বলবে- “আর আমলনামা রাখা হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখতে পাবে ভীত, তাতে যা রয়েছে তার কারণে। আর তারা বলবে, ‘হায় ধ্বংস আমাদের! কী হলো এ কিতাবের! তা ছোট-বড় কিছুই ছাড়ে নি, শুধু সংরক্ষণ করে’ এবং তারা যা করেছে, তা হাযির পাবে। আর তোমার রব কারো প্রতি যুলম করেন না। (আল-কাহাফ: ৪৯)
আল্লামা আখনফ রাহ. বলেন, আমার আশ্চর্য হয়, যে লোকটি প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে দুইবার আগমন করল, সে কীভাবে অহংকার করে। মাতরাফ ইবনু শাখির ইয়াযিদ ইবনু মাহলাবকে দেখল, সে তার পরিধেয় নিয়ে অহংকার করছে। তখন সে তাকে বলল, তোমার এ হাঁটাকে আল্লাহ তা‘য়ালা অপছন্দ করেন। এ কথা শুনে বলল, তুমি কি আমাকে চিন না? তখন বলল, হ্যাঁ আমি তোমাকে চিনি, তোমার শুরু হলো, এক ফোটা নাপাক বীর্য, আর তোমার শেষ হলো, দুর্গন্ধময় লাশ আর এ দু’টির মাঝে তুমি একজন পায়খানা ও ময়লা বহনকারী। এ কথাগুলোকে আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ আল-বাছছামী আল-খাওয়ারেজমী পদ্য আকারে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি তার সুন্দর সুরত নিয়ে অহংকার করে তার বিষয়ে আশ্চর্য না হয়ে পারি না। (সে কিভাবে অহংকার করে?) সে তো ইতোপূর্বে এক ফোটা নিকৃষ্ট বীর্য ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আর তার এত সুন্দর আকৃতির পর তার পরিণাম হলো, আগামীকাল তাকে একটি দুর্গন্ধময় লাশ হিসেবে মাটিতে পুঁতে রাখা হবে। সে দুনিয়াতে যতই বড়াই আর অহংকার করুক না কেন, সে তো তার দুই কাপড়ের মাঝে আজীবন ময়লাই বহনকারী ছিল।” অপর এক কবি বলেন, “স্বীয় সৌন্দর্য ও সুরত নিয়ে হে অহংকার-কারী! মনে রেখ, তুমি অবশ্যই তোমার অহংকারের পর বিলুপ্ত হবে। যদি মানুষ তাদের পেটের মধ্যে কি আছে তা নিয়ে চিন্তা করত! কোনো যুবক বা বৃদ্ধ কারো মধ্যেই অহংকার করার মানসিকতা জাগত না। ‘হে মাটির ছেলে ও আগামী দিনের মাটির খাদ্য, তুমি অহংকার থেকে বিরত থাক! কারণ, তুমি অবশ্যই একদিন খাদ্য ও পানীয়তে রূপান্তরিত হবে।”
২. অহংকারের বস্তুসমূহ নিয়ে চিন্তা করা:
মানুষ যা নিয়ে অহংকার করে তাতে চিন্তা ফিকির করা এবং মেনে নেওয়া যে তার জন্য এসব বস্তু নিয়ে অহংকার করা উচিত নয়। কেউ যদি তার বংশ মর্যাদা নিয়ে অহংকার করে, তখন তাকে বুঝতে হবে যে এটি একটি মূর্খতা বৈ কিছুই হতে পারে না। কারণ, সে তো তার নিজের ভিতরের কোনো যোগ্যতা নিয়ে অহংকার করছে না। সে অহংকার করছে অন্যদের যোগ্যতা নিয়ে, যা একেবারেই বিবেক ও বুদ্ধিহীন কাজ।
উবাই ইবনু কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে দুই লোক বংশ নিয়ে বিবাদ করে। অতঃপর তাদের একজন বলল, আমি অমুকের ছেলে অমুক, তুমি কে? তোমার মা নেই। তাদের বিবাদ শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মুসা ‘আলাইহিস সালামের যুগে দুই ব্যক্তি বংশ নিয়ে ঝগড়া করে। তখন তাদের একজন অপর জনকে বলে, আমি অমুকের ছেলে অমুক, অমুকের ছেলে অমুক, এভাবে সে তার নয় পুরুষ পর্যন্ত গণনা করে, আর বলে তুমি কে? তোমার মা নেই। তখন সে বলল, আমি অমুকের ছেলে অমুক, আর অমুক হলো ইসলামের ছেলে। তিনি বলেন, তাদের বিতর্কের কারণে আল্লাহ তা‘য়ালা মুসা ‘আলাইহিস সালাম কে ওহী দিয়ে পাঠান যে, আপনি এ দুই ব্যক্তি যারা বংশ নিয়ে বিবাদ করছে তাদের বলেন, হে নয় পর্যন্ত গণনাকারী! তুমি যে নয় জনের নাম উল্লেখ করেছ, তারা সবাই জাহান্নামে, আর তুমি হলে তাদের দশম ব্যক্তি। আর অপর ব্যক্তিকে বলেন, হে দুই পরুষ পর্যন্ত গণনাকারী তুমি যে দুইজনের নাম নিলে তারা উভয়ে জান্নাতে যাবে আর তুমি হলে তৃতীয় ব্যক্তি”। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,“আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাদের থেকে জাহেলি যুগের কুসংস্কার ও বাপ-দাদাদের নিয়ে অহংকার করাকে দূর করে দিয়েছেন। মানুষ দু’ধরনের : একজন ঈমানদার মুত্তাকী ব্যক্তি, আর একজন দূরাচার দুর্ভাগা ব্যক্তি। সমগ্র মানুষ আদম ‘আলাইহিস সালামের সন্তান, আর আদম ‘আলাইহিস সালাম হলো, মাটির তৈরি। আল্লাহর শপথ করে বলছি, এমন এক সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে যারা তাদের বংশের লোকদের নিয়ে অহংকার করবে। মনে রাখবে তারা জাহান্নামের কয়লা হতে একরকম কয়লা অথবা তারা আল্লাহ তা‘য়ালার নিকট নাকের থেকে শিন নিক্ষেপ করার নেকড়ার চেয়ে আরও অধিক নিকৃষ্ট।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ কথাটির অর্থ সম্পর্কে আল্লামা খাত্তাবী রাহ. বলেন, মানুষ দুই ধরনের হতে পারে। এক ধরনের মানুষ হলো, মুমিন মুত্তাকী সে হলো উত্তম ব্যক্তি, যদিও সে তার সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানী ব্যক্তি নয়। আর একজন ব্যক্তি হলো, ফাজের বদবখত যদিও সে তার সমাজে সম্মানী ও প্রসিদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
আবার কেউ কেউ বলেন, অহংকারী হয় মুমিন হবে, তাহলে তার জন্য কারো ওপর অহংকার করা উচিত নয়। অথবা সে ফাজের গুনাহগার, সে এমনিতেই আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট, তার অহংকার করার অধিকারই নেই। সুতরাং অহংকার সর্বাবস্থায় রহিত। অহংকার করার কোনো সুযোগই নেই। আর তোমরা হলে আদম সন্তান আর আদম ‘আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। সুতরাং যার মুল হলো মাটি, তার জন্য অহংকার করা কোনো ক্রমেই উচিৎ নয়।
আবু রাইহানা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি তার বংশের নয়জন লোকের কথা উল্লেখ করে এবং তা দ্বারা তার উদ্দেশ্য হলো, ইজ্জত-সম্মান লাভ করা, তারা সবাই জাহান্নামে যাবে আর লোকটি তাদের দশম ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হবে”। যে ব্যক্তি ইলমের কারণে অহংকার করে, তাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যারা আহলে ইলম তাদের ওপর আল্লাহ তা‘য়ালার পাকড়াও আরও অধিক কঠিন। আর যে ব্যক্তি ইলম থাকা সত্বেও আল্লাহর নাফরমানি করে তাকে মনে রাখতে হবে তার অপরাধ খুবই মারাত্মক। আর একজন অহংকারীকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, অহংকার কেবল আল্লাহ তা‘য়ালার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর কারো জন্য অহংকার প্রযোজ্য নয়। যখন কোনো ব্যক্তি অহংকার করে, তখন সে আল্লাহর নিকট ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হবে। এসব চিন্তা যদি একজন মানুষ করে তাহলে তার মধ্যে অহংকার থাকতে পারে না। তাকে বিনয়ের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
একটি কথা মনে রাখতে হবে, ইবাদত বন্দেগী ও নেক আমল নিয়ে অহংকার করা মানুষের জন্য একটি বড় ধরনের ফিতনা। এ বিষয়ে হাদীসে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন,“বনী ইসরাইলের মধ্যে দুইজন লোক ছিল, তারা একে অপরের বন্ধু। তাদের একজন গুনাহ করত আর অপরজন ইবাদতে লিপ্ত থাকত। যে লোকটি ইবাদতে লিপ্ত থাকতো সে সব সময় দেখত তার অপর ভাই গুনাহে মগ্ন। তখন সে তাকে বলত, তুমি গুনাহের কাজ ছেড়ে দাও! কিন্তু সে তার কথা শুনত না। তারপর একদিন তাকে গুনাহ করতে দেখে বলল, তুমি গুনাহ করো না গুনাহ হতে বিরত থাক! সে তার কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ করল না এবং বলল, তুমি আমাকে আমার মত করে চলতে দাও। আমি এবং আমার রবের মাঝে আমাকে ছেড়ে দাও। তুমি কি আমার দায়িত্বশীল হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরিত? তখন সে রাগ হয়ে তাকে বলল, আল্লাহর শপথ করে বলছি আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাকে ক্ষমা করবে না। অথবা বলল, আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না। তারপর আল্লাহ তা‘য়ালা তাদের উভয়ের রুহকে কবজ করল, তারা উভয়ে আল্লাহ তা‘য়ালার দরবারে একত্র হলো, আল্লাহ তা‘য়ালা ইবাদতে যে লোকটি লিপ্ত থাকতো তাকে বলল, তুমি কি আমার সম্পর্কে জানতে অথবা বলল, তুমি কি আমার হাতে কি আছে তা করার ক্ষমতা রাখতে? আর অপরাধীকে বলল, তুমি আমার রহমতের বদৌলতে জান্নাতে প্রবেশ কর! আর অপরজনের বিষয়ে ফিরিশতাদের ডেকে বলল, তোমরা তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাও এবং তাতে তাকে নিক্ষেপ কর। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি ঐ সত্ত্বার কসম করে বলছি, তুমি এমন একটি কথা বলে থাক, যার দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতকে বরবাদ করে দাও”। (ক্রমশ:)