সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-কুরআন

নভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......

বিস্তারিত পড়ুন

আল-হাদীস

ওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......

বিস্তারিত পড়ুন

সংস্কারের উপদেষ্টা মঞ্জুর হোসেন খান

ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন

 

এম. এইচ. খান মঞ্জুর  হোসেন খান আমি তখন আন্তর্জাতিক একটি ত্রাণসংস্থায় কাজ করছি ১৯৯৫ সালের জানুয়ারী থেকে ওই অফিসে মূলত আমার কাজ তার আগে আরো প্রায় দুমাস ওই অফিসের কাজ করেছি পরীক্ষামূলক যা ছিল ১৯৯৪ সালের নভেম্বর ডিসেম্বর শুরুতে আমাদের অফিস ছিল বারিধারায় এরপর অফিস স্থানান্তরিত হল উত্তরার সোনার গাঁ জনপথের ২০ নাম্বার বাড়ীতে ৯৫ এর শেষ দিকে এম. এইচ. খান সাহেব আমাদের অফিসের কনস্ট্রাকশন প্রজেক্ট ডিপার্টমেন্টে এলেন এডভাইজার হিসেবে তিনি এডভাইজার হলেও আমরা তাকে ওই ডিপার্টমেন্টের প্রধানের মতই জানতাম পরবর্তীতে এই বিভাগের দুজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার  এলেন একজন : রাজ্জাক, অন্যজন : রহীম আমরা বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের জন্যে মহাপরিচালক . আহমদ মাহের এর নেতৃত্বে বৈঠকে বসতাম তখনই এম. এইচ. খান সাহেবের সাথে শুরু হয়-অফিসিয়াল জীবন কাজের তাগিদে তাকে সহ অনেক বৈঠক করতে হয়েছে কারণ তখন আমিও অফিসে প্রজেক্ট ইয়াতিম বিভাগের পরিচালক দোতলার দক্ষিণ পাশের দুটি রুমের একটিতে বসতেন এম. এইচ. খান সাহেব সহ তার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং পশ্চিম পাশের রুমে বসতাম আমি প্রজেক্টের ব্যাপকতার ফলে আমার ডিপার্টমেন্ট নিয়ে নিচে নেমে এলাম তিনটি সেকশনে কাজ করতাম আমরা একটি ইয়াতিম বিভাগ. দ্বিতীয়টি জরুরী ত্রাণ মৌসুমী প্রকল্প বিভাগ এবং তৃতীয়টি ছিল কনস্ট্রাকশনমূলক প্রকল্প বিভাগ তিনটি সেকশনের জন্যে প্রয়োজন মত তিনজনকে সেক্রেটারীর দায়িত্ব দেয়া হয় সে প্রসঙ্গে পরে আসি

এম. এইচ. খান সাহেব ছিলেন সদালাপী মৃদুভাষী কথা বলতেন কম তবে তার মনের সাথে মিলে যাওয়া কোন বিষয় পেলে সে বিষয় তার প্রাপ্ত বা লব্ধ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে কখনোই ভুলতেন না এম. এইচ. খান সাহেব আমার পিতৃতুল্য বয়সে অনেক বড় আবার বিভাগীয় এডভাইজার হিসেবে অফিসের ডিজি সহ সবাই আমরা তাকে স্যার বলে সম্বোধন করতাম মাঝে মাঝে ঝট করে গাড়ী নিয়ে কোন প্রকল্পের ফলো-আপের জন্যে আমরা বেরিয়ে পড়তাম অফিসের কাজে বেরিয়ে কিংবা অফিসের বৈঠকাদিতে বসেই তার এবং আমার মন-মানসিকতা, আমাদের চাওয়া-পাওয়া, আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের মধ্যে পরিচয় ঘটে উনি আমাকেইসমাইল ভাই বলে ডাকতেন আরো কাছাকাছি এলাম আমরা, কিছু অনুষ্ঠানে পাশাপাশি অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছি তার বক্তব্য শোনার এবং বোঝার সুযোগ হয়েছে এভাবেই চলছিল সেই দিনগুলো

আমার বাসা তখন শেওড়াপাড়া আর আমাদের কালচারাল কাজের অফিস এবং আড্ডা ছিল সোনারগাঁও রোডে, বাংলা মোটরে আমরা চেষ্টা চালাছি সংস্কার পত্রিকার ডিক্লারেশন নেয়ার ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এলো আওয়ামী লীগ সবকিছু ডিঙ্গিয়ে আমি সময় মাসিক সংস্কারের ডিক্লারেশন পেলাম ডিক্লারেশনের পর ৯০ দিনের মধ্যে পত্রিকার প্রথম সংখ্যা বের করার একটি বাধ্যবাধকতা ছিল তাই বাংলা মোটরে বসে পত্রিকার প্রথম সংখ্যা নিয়ে কাজ করছি ইতিমধ্যে অফিসের অনেকেও জেনেছেন পত্রিকার কথা কিন্তু অনেকেই গুরুত্ব দিলেন না আমাকে একদিন স্যার জিজ্ঞেস করলেন-ইসমাইল এতো ব্যস্ত কেন? বললাম নতুন একটা বিষয় তারপর তাকে বললাম, আমরা একটি মাসিক পত্রিকা করছি তিনি খুব সুন্দর কাজ বলে সম্মতি দিলেন এরপর ১৯৯৭ এর আগষ্ট মাসে বেরুল সংস্কার এর প্রথম সংখ্যাটি একটা সাড়া পড়লো, আমার বন্ধু-বান্ধব সহ সবার মাঝে ইতিমধ্যে পত্রিকার কপি দিলাম পাঠকদের হাতে আমি সকলের সহযোগিতা চাইলাম সহযোগিতা অনেক ভাবে লেখা দিয়ে, বিজ্ঞাপন দিয়ে, অর্থ দিয়ে কিংবা পরামর্শ দিয়ে পত্রিকা বেরুল স্যারও খুশী হলেন লেখা চাইলাম তার কাছে তিনি বললেন, আমার বাংলা ভালো নয় আমি বাংলায় লেখালেখিতে অভ্যস্ত নই তাকে বললাম আপনি বাংলায় সুন্দর করে কথা যেহেতু বলতে পারছেন, সেহেতু লেখাও তৈরী করতে পারবেন ১৯৯৮ সালের আগষ্ট সংখ্যায় সুধীজনের অনুভূতি বিভাগে তিনি স্বতঃস্ফুর্ত ভাবেই একটি ছোট্র লেখা দিলেন কিন্তু লেখাটির ভেতর ছিল তার হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি, ভালোবাসা, ভালোলাগা তিনি একটি পত্রিকা করার অভিজ্ঞতা নিয়ে-শেয়ার করলেন আরেক দিন আমি আমার অফিসের মহাপরিচালকের অনুরোধে চলে গেলাম বাংলাদেশস্থ কুয়েত দূতাবাসে সেখানে ডিপ্লোমটিক পরিবেশে হল আমার চাকুরী পত্রিকার প্রকাশনার সুবিধার্থে বাংলামোটর থেকে স্থানান্তরিত হলাম অফিস নিয়ে গেলাম কাজী পাড়ায়, বেগম রোকেয়া সরণীতে কাজী পাড়া আলীয়া মাদরাসা মার্কেটে হল অফিস বাসা পরিবর্তন করে শেওড়াপাড়া, রাস্তার পশ্চিম পাশ থেকে এলাম পূর্বপাশে এভাবে চললো কিছু দিন প্রায় বছর দুতিন সংস্কার অফিস নিয়ে গেলাম ফকিরাপুলে এরমধ্যে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাম এরাবিক ডিপার্টমেন্টে ডিপ্লোমটিক পরিবেশ ভালো লাগলেও অধ্যাপনাকে বেছে নিলাম ২০০১ এর দিকে পত্রিকা নিয়ে পড়ে গেলাম সংকটে পত্রিকার খরচ হু হু করে বাড়ছে সামাল দিতে পারলাম না তখন পত্রিকা বন্ধ হয় হয় অবস্থা বন্ধ করার আগ মুহুর্তে বন্ধুবান্ধব এবং শুভানুধ্যায়ী অনেকের সাথে কথা বলেছি যেহেতু মঞ্জুর স্যার বিষয়ে খুবই আন্তরিক, সেহেতু তার সাথেও বিষয়টি নিয়ে কথা বললাম

স্যার তখন গুলশান লেকের উত্তর পূর্ব কোনের একটি ফ্ল্যাট বাড়ীর বাসিন্দা সময় এবং তারিখ নির্ধারণ করে তাঁর বাসায় বৈঠক ডাকা হল বৈঠকের অন্যরা হলেন শ্রদ্ধেয় মাওলানা মো: সালেম ওয়াহেদী, . গাজী মো: জহিরুল ইসলাম জনাব , এফ, এম, আব্দুল মোত্তালিব সেখানে অনেক কথা, আলোচনা, পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত হলো আমরা উপস্থিত পাঁচজন, প্রতিজন সংস্কারের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ হারে টাকা যোগান দেবো টাকাটা পত্রিকা বিক্রির মাধ্যমে হতে পারে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান বা সংগ্রহের মাধ্যমে হতে পারে, নিজের বা সংগৃহীত অনুদান হতে পারে সিদ্ধান্তের পর পত্রিকাটি বন্ধ থেকে বেঁচে গেল সিদ্ধান্ত মত সহযোগিতা অনেকেই করেছেন, থেমেছেন, আবার শুরু করেছেন, তবে মঞ্জুর স্যার তা বন্ধ করেন নি সম্ভবত অসুস্থ হয়ে পড়ার পাঁচ/ছয়মাস আগেও তিনি সহযোগিতা করে গেছেন

মঞ্জুর স্যারদের প্রচেষ্টায় প্রকাশিত সংস্কার এর প্রিন্টার্স লাইন, ব্যানারে প্রত্যেকের নাম দেয়া শুরু করলাম স্যার এবং মাও. সালেম ওয়াহেদী উপদেষ্টা সে থেকে স্যার আমার সংস্কারের সাথে রক্তে মিশে থাকা সত্ত্বাবার মতই

স্যার বাংলায় লিখতে পারতেন কম তাকে সাহস দিয়ে বললাম, লেখা দাঁড় করান আমি দেখে দেব তিনি লেখা শুরু করলেন প্রথমত: তার এক একটি লেখার ইংরেজী শব্দ সংখ্যা বাংলা শব্দ সংখ্যার চেয়েও বেশী থাকতো পরে তার হাতের লেখার স্টাইলটা কম্পিউটার অপারেটরের কাছে আরো সহজ করার লক্ষ্যে বললাম শব্দগুলোর ইংরেজী প্রতিশব্দ বা উচ্চারণ ব্রাকেটের মধ্যে দেয়ার জন্যে তিনি তাই করলেন সম্পাদনায় অনেকটা সুবিধা হল এভাবে লিখতে লিখতে দেখা গেল স্যারের বাংলা লেখায় ইংরেজী শব্দের পরিমাণ (পাঁচ) ভাগের এক ভাগে নেমে এল কালক্রমে তার  লেখায় ইংরেজী শব্দের পরিমাণ (এক) বা দুই () শতাংশে নেমে আসে স্যার কোন কোন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গেলে লক্ষ্য করতাম যে তার প্রতিটি কথার সাথে স্মৃতিচারণ মূলক তথ্যগুলো চলে আসে

একবার স্যারের গুলশানের বাসায় কথা হচ্ছিল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, সেদিন আসর এবং মাগরিব তার বাসায়ই আদায় করেছি লম্বা কথা হচ্ছিল সেদিন স্যারকে বললাম, আপনি স্মৃতিচারণমূলক লেখা শুরু করুন আমি সম্পাদনা করে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করবো যেই কথা সেই কাজ সম্ভবত: তার পরের সংখ্যায়ই স্যারের স্মৃতিচারণ প্রথম পর্ব শুরু হল তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই একজন ভালো মানুষ তিনি ছিলেন উদার

তিনি ছিলেন সত্যাশ্রয়ী ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুর হোসেন খান ছিলেন ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার একবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম-কেন সে মেক্যানিকাল ইজ্ঞিনিয়ারিং- পড়াশোনা করলো? সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপারে তার মতামত কি? তিনি তার বাবার কথা বললেন যে, তার বাবা তাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে নিষেধ করেছেন কারণ তিনি পরে বুঝতে পেরেছেন ব্যাপারে তিনি বলতেন যে, এর সাথে যারা জড়িত তারা যদি প্রকৃত ঈমানদার না হয়, তাহলে এর প্রতিটি লাইনে লাইনে চুরির সম্ভাবনা থাকে ইট, পাথর, বালু, রড, সিমেন্টসহ এই পেশার প্রতিটি বিষয়েই বিভিন্ন ক্যাটাগরি আছে ফলে যারা চায় তারা চুরি, মিথ্যে, প্রতারণায় সহজেই জড়িয়ে পড়তে পারে তাই তিনি বিষয়ে দূরত্ব বজায় রাখতেন অবশ্য এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারই ছিল

মঞ্জুর স্যার একজন ভালো মনের ইসলামী চিন্তাবিদ ছিলেন একবার কথা প্রসঙ্গে উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে বরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ সুসাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম রাহ. সম্পর্কে তার সাথে কথা হল তা-কে তিনি খুব ভালো বাসতেন এমনকি তার রাজনৈতিক  চিন্তা চেতনাকেও প্রশংসা করতেন ছাড়া আজীবন গুলশানের আজাদ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাথে জড়িত ছিলেন তিনি সবসময় মসজিদে জামাতে নামায আদায় করতেন অনেক সময় গাড়ী না পেলে অবশ্য বাসায় নামায আদায়ের কথা বলতেন মাঝে মাঝে বলতেন-আজ মনে হয় গাড়ী পাবো না তাই নামাযটা বাসায়ই আদায় করে নেবো আমি কখনো সময় চাইলে সময় দিতেন এবং নামাযের সময় সামনে পড়লে এভাবে কথা বলতেন

আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাসী, মর্দে মুমিন হিসেবে মঞ্জুর স্যারের তুলনা নেই তিনি ছিলেন আমার দৃষ্টিতে আত্মকেন্দ্রিক অথবা শেষ জীবনে আমি তার সাথে যতটা কথাবার্তা বলেছি, যোগাযোগ রেখেছি-তাতে আমার তাই মনে হয়েছে তিনি ছিলেন প্রচার বিমুখ নিজের প্রচার করে বেড়াবার পাত্র তিনি ছিলেন না অন্যদিকে কিছুটা অভিমানী গোছের ছিলেন তিনি একবার টানা  মাস খানেক তার সাথে কথা বলার সুযোগ হয় নি হঠাৎ একদিন ফোন করার পর বললেন, ইসমাইল ভাই, এখন মনে হয় আমাদের  না হলেও চলবে? আমি তো এক্কেবারে হয়ে গেলাম আরগুমেন্ট না করে তাকে বললাম, স্যার আপনার সাথে দেখা করতে চাই সাক্ষাতে কথা বলবো তিনি সময় দিলেন আমিও চলে গেলাম পরে বুঝলাম, আমার ব্যাপারে আমাদের কেউ তাকে কিছু ভুল তথ্য দিয়েছে স্যার আমাকে দুএক জায়গায় খোঁচা দিয়ে কথা বললেন আমার যা বুঝার তা বুঝা হয়ে গেল স্যার জিজ্ঞেস না করলেও আমিই আগ্রহী হয়ে দীর্ঘক্ষণ থেকে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কথা বললাম আমি শুধু আমার অবস্থানটা তুলে ধরলাম আমি বুঝাতে সক্ষম হলাম যে আসলে আমার ব্যাপারে স্যার একটি ধারণা করে ভুল বুঝে আছে আমি একটি একটি করে পয়েন্ট নিয়ে আলাপ করছি, উনি বলেন- তা হলে যে শুনেছি... এভাবে তার চেহারায়ও পরিবর্তন হতে হতে এতোটাই স্বাভাবিক হলেন যে তার  পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করে দিলেন

স্যারের সহধর্মীনী-এখনো জীবিত রয়েছেন আল্লাহ তাঁকে আরো হায়াত দিন আমিন আমার একটা বিশাল শ্রদ্ধা তার স্ত্রীর প্রতি দাম্পত্য জীবনে একজন সুখী মানুষ হিসেবেই বোধ করি স্যার তার সহধর্মীনীকে নিয়ে জীবন চালিয়ে গেছেন স্যারের স্ত্রীর চিকিৎসা বিষয়ে আমাকে অনেক কথা বলেছিলেন কিভাবে জটিল রোগ থেকে বাঁচার আশা ত্যাগ করে হাসপাতাল তাকে ফেরত দিয়েছিল. তারপর হোমিও এবং বায়োকেমিক চিকিৎসা দ্বারা স্যার কিভাবে ধীরে ধীরে চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু করলেন এবং মহান আল্লাহ কিভাবে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, সুস্থ ভাবে, ইত্যাদি নিয়েও আমার সাথে বহুবার কথা হয়েছিল স্যার পড়ে পড়ে একজন চিকিৎসকও হয়ে গিয়েছিলেন আমার নানাবিধি সমস্যায় কখনো পরামর্শ চাইলেও তিনি ঔষধের নাম বলে দিতে কাপর্ণ্য করতেন না

আমরা সংস্কার অফিস কেন্দ্রিক অন্য একটি বেসরকারী সংস্থার ব্যানারে ফ্রি ফ্রাইডে এবং সপ্তাহে একদিন ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম উত্তরা নং সেক্টরে আমাদের ঔষধ দিয়ে এবং রোগী দেখে সহযোগিতা করেছিলেন আমার বন্ধু প্রতীম মারহুম ডা: সুলাইমান হক তিনি উত্তরা হোমিওপ্যাথী মেডিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত  অধ্যক্ষ ছিলেন আমাদের ফ্রি চিকিৎসা কর্মসূচীর উদ্বোধন করেছিলেন আমাদের মঞ্জুর স্যার সেখানে ডা: সুলাইমান এবং বনানীর ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান খানও উপস্থিত ছিলেন

মঞ্জুর  স্যারের ব্যক্তিগত লাইব্রেরীর ধর্মীয় বইগুলোসৌজন্যে ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুর হোসেন খান সীল মেরে তা সংরক্ষণ করেছি সংস্কার এর লাইব্রেরী ব্যবহারকারীরা তা থেকে উপকৃত হয়েছে হচ্ছে আল্লাহ তাকে সকলের সঠিক প্রতিদান দিন

মঞ্জুর স্যার আমেরিকা নিবাসী জনাব জামাল খান এর কাছে সংস্কার পৌঁছে দিয়েছিলেন তার কাছ থেকে দুতিনবার অনুদান সংগ্রহও করে দিয়েছিলেন আমরা স্যারের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত জামাল সাহেবের সেখানে পত্রিকাও পাঠিয়েছিলাম অবশ্য এক সময় কয়েকটি কপি ফেরত আসার পর আর আমরা তাকে পত্রিকা পাঠাতে সক্ষম হই নি ছাড়াও স্যার নিয়মিত প্রায় বিশটি পত্রিকা তার বন্ধুবান্ধব এবং মুসল্লিদের মধ্যো সৌজন্য দিতেন

স্যার ছিলেন একজন দানশীল সংস্কারের জন্যে তার অর্থনৈতিক বদান্যতা আমরা কখনোই ভুলবো না ছাড়াও সময় সময় সংস্কারে চাকুরীরতরাও তার কাছ থেকে বিভিন্ন অনুদান পেয়েছে বিশেষ করে মসজিদ, মাদরাসা স্থাপন, কুরআন সুন্নাহ শেখানো প্রশিক্ষণের জন্যে সংগোপনে তিনি উদার মনে দান করতেন

মারহুম মঞ্জুর স্যার আজ আমাদের মাঝে নেই একদিন আমরাও থাকবো না তবে স্যার খুব ভাগ্যবান কারণ, মানুষ মারা গেলে কিছুই তার কবরে যায় না শুধু মাত্র তিনটি বিষয় ব্যাপারে ব্যতিক্রম যার সাওয়াব কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে তা হচ্ছে-. সাদাকায়ে জারিয়া, যা তিনি অনেক করেছেন, . এমন জ্ঞান- যা দ্বারা মানুষের উপকার হয় এবং . নেক সন্তান যারা তার জন্যে দোয়া করে মাগফিরাত কামনা করে আমার বিশ্বাস স্যার তিনটি বিষয়েই যথেষ্ট পরিমাণে সফল স্যারের সন্তান-সন্ততির মধ্যে এক ছেলে এবং দুমেয়ে তাদেরও সন্তানাদি বেড়ে পরিবার সম্প্রসারিত হয়েছে হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই যদি মারহুম স্যারের জন্যে মাগফিরাত কামনা করে, দোয়া করে তা আল্লাহ কখনোই ফিরিয়ে দেবেন না আর তাই সন্তানদের উচিৎ হবে নিজেরা ভালো আমল করে তার অংশ মারহুম বাবার জন্যে মাগফিরাতের উসিলা হিসেবে বখশে দিয়ে তাকে বারযাখের জীবনে, পরবর্তীতে কিয়ামতের সকল স্তরে বেহেস্ত  বাসীদের কাতারে শামিল করবার চেষ্টা চালানো

বছর এলেই মারহুম মঞ্জুর স্যারের স্মৃতিকথা আমাদের তথা সংস্কারের প্রতিটি পাঠকের মনে নাড়া দেবে এতে সন্দেহ নেই। আমরা তার জন্যে আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, হে আল্লাহ! মঞ্জুর স্যারকে তুমি জান্নাতুল ফিরদাউস নাসিব কর। আমীন। পাশাপাশি তার সহধর্মীনী পুত্র-পুত্রবধু, কণ্যাদ্বয় এবং তাদের পরিবারের সকল সদস্যকে তাওফীক দাও-যেন তারা স্যারের নেক সন্তান, পরিবার-পরিজন হিসেবে দুনিয়া ও আখেরাতে ভালো কাজের মাধ্যমে বিজয় লাভ করতে পারে। আমীন। (পূণ:মুদ্রিত)