সম্পাদকীয়(সংস্কার: নভেম্বর-ডিসেম্বর 2021)মহামারী। প্যানডেমিক। করোনা কাল। করোনায় কেড়ে নিল প্রায় দু'টি বছরের চেয়েও বেশি সময়। ২০২০ সালে করোনাকালের লকডাউনের কথা স্মৃতি হয়ে আজও সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে.......
বিস্তারিত পড়ুননভেম্বর-ডিসেম্বর2021(আয়াত নং: ১৯ থেকে ৩১)১৯. মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা রয়েছে তারা তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে অহংকার করে না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।২০. তারা তাঁর তসবিহ করে, রা.......
বিস্তারিত পড়ুনওমর ইবনু খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল করতে আরম্ভ কর যেমন তাওয়াক্কুলের হক রয়েছে তবে তোমাদেরকে.......
বিস্তারিত পড়ুনরোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সংসদে বিশেষভাবে আলোচনা করে প্রস্তাব গ্রহণ এবং একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন সিনিয়র সংসদ সদস্যরা। প্রয়োজনে কমিটি ভারত, চীন, মিয়ানমার ও জাতিসঙ্ঘ সফর করে প্রতিবেদন তৈরী করে তা সংসদে পেশ করবে। তারা বলেন, এটি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান দ্বিপক্ষীয়ভাবে হবে না, জাতিসঙ্ঘসহ ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। তারা বলেন, আর কত দিন আমরা এই বোঝা বহন করব। মিয়ানমারের সাথে আমাদের যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিল তা যথাযথ ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নতুন সংসদ এবং বর্তমান সরকারের অবস্থান কী তা দেশবাসী ও বিশ্বকে জানানো উচিত।
সরকারি দলের সিনিয়র সদস্য সাবেক মন্ত্রী মো: নাসিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে সম্প্রতি এই আহ্বান জানান। এ সময় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করছিলেন। মাগরিবের বিরতির পর প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন।
মো: নাসিম বলেন, আজকে একটি পত্রিকায় হেডলাইন আছে, বিশ্বের সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে। মিয়ানমারের পর এখন ভারত ও সৌদি আরব থেকেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে। গতকালের সংবাদপত্রে রয়েছে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে সম্মানের সাথে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর বিশেষ দূত হলিউড অভিনেত্রী এঞ্জেলা জোলি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। বক্তারা বলেন, এ ব্যাপারে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলেছেন ইউরোপে শরণার্থী নিতে ধনী দেশগুলো ভয় পেয়েছিল, আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি স্বপ্লোন্নত দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও মায়ের মমতা নিয়ে ২০১৬ সালে এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। এখন ১১ লাখ রোহিঙ্গা আছে বাংলাদেশে। এ জন্য তিনি মাদার অব হিউমিনিটি হয়েছেন। আমরা বলতে চাই, আর কত দিন এই বোঝা বহন করব? সারা দুনিয়া কথা দিয়েছে। অনেকে এখানে এসে সার্ভিস দিয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। যেহেতু সংসদ চলছে, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের পরে একটি দিন নির্ধারণ করুন, যেখানে আমরা সব দল মিলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আমাদের করণীয় কী, সরকারের পদক্ষেপগুলো কী, আলোচনা করা দরকার। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা ১৬ কোটি মানুষ। তার মধ্যে ১১-১২ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা। এই কয়েক বছরের মিয়ানমারের অনীহার কারণে মাত্র তিনজন ফেরত গেছে। তাই অনুরোধ করব, একটি বিশেষ আলোচনার ব্যবস্থা করা হোক। আমরা সব দল আছি, সরকারি-বিরোধী দল আছি। আমরা আলোচনা করে মতামত দেই। প্রয়োজনে সংসদীয় কমিটি গঠন করে সব দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে ভারত, চীন, মিয়ানমারে গিয়ে আলোচনা করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। এভাবে চলতে পারে না।
রাশেদ খান মেনন, মো: নাসিমের প্রস্তাব সমর্থন করে বলেন, এই দ্বিপক্ষীয় যে চুক্তি আমরা মিয়ানমারের সাথে করেছিলাম এ বিষয়টি কতখানি যথাযথ ছিল তা খতিয়ে দেখা দরকার। আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে সেখানে একটি শর্ত ছিল স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন করলে পরেই তারা ফিরে যাবেন। এই স্বেচ্ছা শব্দটি যখনই যুক্ত করা হয়েছে তখনই সেটি বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না বলে আমি মনে করি। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু এইটুকু বলতে চাই, আন্তর্জাতিক বন্ধুরা যে পরামর্শ দিয়ে মনে করেছেন সমস্যার সমাধান করবেন তা তারা তাদের রাজনীতি করেছেন আমাদের রাজনীতি করেননি। এই সমস্যা চলতে পারে না। মিয়ানমার কখনো ফিলিস্তিনের মতো হতে পারে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেটা বলেছেন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতাও সমস্যা। দেশের ইয়াবা নিয়ে অভিযোগ চলছে। ট্র্যাক টু ডিপ্লোমেসি বলে একটি কথা আছে। সরকারের বাইরে যারা আছেন তারাও এই ইস্যুতে সহযোগিতা করতে পারেন। আমরা দেখেছি পার্বত্য শাস্তিচুক্তির সময় এই ট্র্যুাক টু ডিপ্লোমেসি কাজ করেছে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, একাদশ সংসদ যাত্রা শুরু করেছে। জনগণের প্রতিনিধিরা আজকে যারা সংসদে বসে আছেন তারা বিশ্ববাসীর কাছে বলা দরকার, রোহিঙ্গা বিষয়টা আমরা কিভাবে দেখছি। সে জন্য আমি মনে করি মো: নাসিমের প্রস্তাব আলোচনার জন্য একটা দিন ধার্য করুন। জনপ্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কী দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করেন তা দেশবাসীকে এবং বিশ্ববাসীকে জানানো উচিত। একই সাথে সরকারের প্রতিও একটি দিকনির্দেশনামূলক প্রস্তাব এখানে পাস করা হোক। তিনি প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, এর একটি ইতিবাচক সমাধান দরকার। এ সমস্যা বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা।
নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, চট্টগ্রামের অবস্থা ভয়াবহ। কক্সবাজার আরো সমস্যার মধ্যে আছে। এই সমস্যা দূর করার জন্য সর্বদলীয় কমিটি করার প্রস্তাব করছি।হ
প্রত্যেক মানুষ চায় স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার যে কত বড় মাপের, তা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধরাই কেবল অনুধাবন করতে পারেন। তাই স্বাধীনতাকে খর্ব করার অধিকার কারো নেই। এ অধিকার খর্ব করা যেমন মানবাধিকার পরিপন্থী; তেমনি মহান আল্লাহর আইনের বিরোধীও বটে। স্বাধীনতা আল্লাহ প্রদত্ত্ব এক আমানত, যা আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দান করেছেন। অমূল্য এ আমানত রক্ষার ব্যাপারে কোনো ধরনের অবহেলা ও বিশ্বাস ঘাতকতা মোটেই কাম্য নয়। মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হলে তারা বিভ্রান্ত হয় এবং অধ:পতনের শিকার হয়। উন্নত সমাজ ও জাতি গঠনে স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই।
আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন করেই সৃষ্টি করেছেন এবং এই স্বাধীনতা নিয়েই মানুষ জন্মগ্রহণ করে। তার জন্মগত অধিকার হচ্ছে কেউ তাকে তার এই স্বাধীনতা ভোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না। জোর-জবরদস্তি করে তাকে দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি করবে না।
ইসলাম যখন স্বাধীনতাকে তার মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করে তখন সময়টি ছিল এমন যে, অধিকাংশ মানুষ বুদ্ধি বৃত্তিক, রাজনীতিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিকভাবে আক্ষরিক অর্থেই ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল। মানুষের এই বহুরূপ দাসত্ব-শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে ইসলাম স্বাধীনতা ঘোষণা করল। বিশ্বাসের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা এবং সমালোচনার স্বাধীনতাসহ সব ক্ষেত্রেই ইসলাম স্বাধীনতা দিয়েছে। আর চিরকাল ধরে এসব বিষয়েই মানুষ তাদের স্বাধীনতা প্রত্যাশা করে আসছে। এটা হলো ব্যক্তি জীবনের স্বাধীনতা। আবার কোন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে জবর দখলের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। কোন এক সময় জাতি রুখে দাঁড়ায়, তীব্র প্রতিরোধ বা যুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে শৃঙ্খল মুক্ত করে দেশকে স্বাধীন করে। আর এটাকে বলে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। তাই ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি।
দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় বাংলাদেশের বিজয় ও স্বাধীনতা। পাকিস্তানি শাসন, শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য স্বাধীনতার সংগ্রামে এ দেশের জনগণ জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ইসলাম যে দেশ প্রেম তথা মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধের কথা বলেছে এই যুদ্ধ ছিলো সেই চেতনারই শামিল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ ও স্বভাব-চরিত্রে দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। তিনি মাতৃভূমি মক্কাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাই স্বজাতি কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে জন্মভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকালে বারবার মক্কার দিকে ফিরে তাকিয়ে কাতর কণ্ঠে আফসোস করে বলেছিলেন, ‘হে আমার স্বদেশ! আমি তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। যদি না আমাকে বাধ্য করা হতো।’
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান, সত্যের দ্ব্যর্থহীন প্রকাশ ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা ইসলামকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যে ভূষিত করেছে। ইসলাম স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা ও চর্চা, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা লাভসহ শাসকগোষ্ঠী ও আমলাদের ওপর জনসাধারণের নজরদারি এবং ভদ্রোচিত পদ্ধতিতে তাদের সমালোচনার শিক্ষা দিয়েছে। যেন এসব থেকে তারা শিক্ষা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। উদ্দেশ্য একটাই, দেশকে তার গন্তব্য ও সঠিক লক্ষ্যে পরিচালিত করা। এ বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয় খোলাফায়ে রাশেদিনের জীবনাচার ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়টি সামনে আনলে।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ চিন্তা, বিশ্বাস ও আদর্শ বেছে নেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন। এমনকি ভিন্নমতের অধিকারী ব্যক্তি অধিকারকেও স্বীকার করে ইসলাম। তবে ইসলাম স্বাধীনতার কিছু সীমারেখা টেনে দিয়েছে, যাতে তা মানুষের বিভ্রান্তি ও অধ:পতন কিংবা অন্যদের ক্ষতির মাধ্যম না হয় বা অন্যদের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ না করে।
ইসলাম গতানুগতিক কোনো স্বাধীনতার শ্লোগান বা গান নিয়ে আসেনি, ইসলাম মানবতার সামগ্রিক জীবনে মুক্তি, সাম্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার বাস্তব কর্মসূচি দিয়ে মানুষকে সৎ পথে চলার দিকনির্দেশনা দিতে এসেছে। ইসলাম মানব জীবনে ধর্মীয় স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি দিয়ে ধন্য করেছে। এ অধিকার উপেক্ষ করে যুগে যুগে কিছু পাপাচারী স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে যেয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে পরোক্ষভাবে নাগরিক জীবনকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দেশে দেশে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ইসলাম শুধু পুরুষদের তার মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়নি, নারীদেরও তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে।
ইসলাম রক্তপাত, হানাহানি, মারামারি, হত্যা অথবা ইসলাম গ্রহণে জবরদস্তির অনুমোদন দেয় না, কিন্তু অন্যায়, হত্যা, স্বাধীনতা হরণ প্রতিরোধে যুদ্ধ করতেও নির্দেশ দেয়। নিজ দেশকে পরাধীনতামুক্ত রাখতে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কেননা কোনো জুলুমকেই প্রশ্রয় দেয় না ইসলাম। জালিমদের খপ্পর থেকে মুক্ত ও স্বাধীন করতে লড়াই করার তাগিদ দিয়ে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কী হলো যে, তোমরা যুদ্ধ করবে না আল্লাহর পথে এবং অসহায় নর-নারী এবং শিশুদের জন্য যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এই জনপদ-যার অধিপতি জালিম, তার থেকে আমাদেরকে অন্যত্র নিয়ে যাও, তোমার নিকট থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক কর এবং তোমার নিকট থেকে কাউকেও আমাদের সহায় কর।’ (নিসা:৭৫)
জুলুম ও শোষণমুক্ত, আল্লাহদ্রোহী মানসিকতামুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রকে কল্যাণরাষ্ট্রে অক্ষুণœ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কেননা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা অধিক কঠিন। তাই তো আল্লাহ আদেশ করেছেন, ‘তোমরা সর্বদাই তোমাদের শত্র“দের প্রতিহত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে সাবধান থাকবে। এই প্রস্তুতি দ্বারা তোমরা তোমাদের এবং আল্লাহর দুশমনদের ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখবে।’ (আনফাল:৬০)
ইসলাম স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হলেও সে স্বাধীনতা বল্গাহীন স্বাধীনতা নয়। সে স্বাধীনতা কিছু বিধিনিষেধ দ্বারা সুনিয়ন্ত্রিত। ইসলামে স্বাধীনতা হচ্ছে নিজেকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে।’ (আনয়াম:১৬২) ইসলাম মানুষকে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে, কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরতান্ত্রিকতাকে মোটেও প্রশ্রয় দেয়নি। দলের ঊর্ধ্বে উঠে ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন, দুর্বল-সবল সকলের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করো।’ (নিসা:১০৫) ইসলাম মানুষকে বৈধভাবে জৈবিক চাহিদা পূরণ করার অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু জেনা-ব্যভিচারকে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (বনি ঈসরাইল:৩২) ইসলাম পোশাক পরিধানের স্বাধীনতা দিয়েছে, অশালীন পোশাক পরিধানে বারণ করেছে। ইসলাম মানুষকে অর্থ উপার্জনের স্বাধীনতা দিয়েছে, কিন্তু অবৈধ পথ পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়েছে, ‘সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে।’ (জুমু’আ:১০) ইসলাম বৈধভাবে অর্থ ভোগের স্বাধীনতা দিলেও অর্থনৈতিক বৈষম্য রোধে ধনীদের সম্পদে এক’ছত্র ভোগাধিকার দেয়নি। বলা হয়েছে, ‘তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক।’ (জারিয়াত:১৯) অর্থ উপার্জনে ইসলাম ব্যবসাকে বৈধ করলেও সুদকে চিরতরে হারাম ঘোষণা করেছে। ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (বাকারা: ২৭৫)
ইসলাম শোষণমুক্তির কথা বলে। মানুষের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে মানুষকে আল্লাহর কাছে সমর্পিত হতে শিক্ষা দেয়। কাজেই মুসলমানের প্রকৃত মুক্তি ও সফলতা হলো পরকালীন মুক্তি ও সাফল্য। কোনো কাজে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য না হওয়া পর্যন্তই মুসলমানদের স্বাধীনতা রয়েছে।
প্রতিবছর মহান স্বাধীনতা দিবস জাতির জীবনে প্রেরণায় উজ্জীবিত হওয়ার নতুন বার্তা নিয়ে আসে। স্বাধীনতা দিবস তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুক্তির প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের দিন। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও আমরা ুক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, গ্লানি থেকে মুক্তি পাইনি। এবারের স্বাধীনতা দিবসে তাই আমাদের শপথ হওয়া উচিত ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষর মুক্ত দেশ গড়ার। যে দেশের জনগণ ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণ ও কোটি জনতার ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করে, সে জাতি এক বীরের জাতি। ৭১ আমাদেরকে শিখিয়েছে দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণের জন্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ত্যাগ স্বীকার করা। এবারের স্বাধীনতা দিবসে আমরা তাই নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ন্যায়, সাম্য প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের জন্য শপথ গ্রহণ করি। (লেখক:প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক)